ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমন্বিত উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৯:১২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সমন্বিত উন্নয়ন

বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন পরিকল্পনায় নিরন্তর এগিয়ে যাচ্ছে। সমৃদ্ধির হরেক রকম কর্মদ্যোতনায় যে অব্যাহত অগ্রযাত্রা, তা যেন সুপরিকল্পিত এবং সমন্বিতভাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারে, সে ব্যাপারে সজাগ এবং সচেতন থাকতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধারাবাহিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় সুসম্পর্ক এবং মিলিত কর্মযোগের ঘাটতি পুরো ব্যবস্থাকে বেসামাল করে দিতে পারে। বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণে সুসংহত এবং সমন্বিত পরিকল্পনাসমূহ সুষ্ঠু ও যথার্থ কর্মযোগে সম্পন্ন করতে তীক্ষè নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের সোনারগাঁও বুয়েট লিঙ্কের হাতিরঝিল অংশের পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করার সময় এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আসে। সময়ের ফারাকে বিভিন্ন কর্মপ্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করা মুশকিল হলেও এই ব্যাপারটিকে বিশেষ বিবেচনায় আমলে নেয়া সঙ্গত। তা না হলে নির্মীয়মাণ প্রকল্পসমূহ ত্রুটিবিচ্যুতির আবর্তে পড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। কর্মপরিকল্পনাগুলো এক সঙ্গে সমন্বিত উপায়ে এগিয়ে নেয়া খুব কঠিন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী নতুন নক্সার সঙ্গে হাতিরঝিলের এই প্রকল্প এক সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যথার্থ পরিক্রমায় বনানী, মহাখালী, তেজগাঁ, মগবাজার ও কমলাপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার মূল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ওপর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পরামর্শ অত্যন্ত সময়োপযোগী। যাতে মেগা প্রকল্পগুলো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একটি পরিকল্পিত, নিরাপদ, জনবান্ধব রাজধানী গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। উল্লেখ্য, আগামীতে নতুন মাত্রায় বৈদ্যুতিক তারও মাটির নিচ দিয়েও নেয়ার প্রকল্প ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে। একইভাবে পানি ও গ্যাসের পাইপ লাইনও মাটির গভীরে নেয়ার সময় আগের প্রকল্পকেও সমন্বয় করতে হবে। বার বার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ বাড়ে, সময়ের অপচয় হয়। তার চেয়েও বেশি ব্যয় বাহুল্যে প্রকল্পগুলো গন্তব্যে যেতেও হিমশিম খায়। কর্মপরিকল্পনাগুলো যতই বিক্ষিপ্ত এবং আলাদাভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, ততই দীর্ঘসূত্রতার সঙ্গে এলোমেলো পরিস্থিতিও সামলাতে হয়। সুষ্ঠু ও সমন্বিতভাবে এগিয়ে যাওয়া কর্মযোগে দুর্নীতির মতো দুর্বিপাকও সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়। শুধু সমন্বয়হীনতার অভাবে সমস্ত ব্যবস্থাপনায় আসে অনাকাক্সিক্ষত স্থবিরতা। আর সময় ও অর্থ ব্যয়ের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। আইয়ুব সরকারের আমল থেকে জলাশয়ের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপে মতিঝিলের একটি বৃহদাকার ঝিল ধ্বংস হতে সময় লাগেনি। এভাবে রাজধানীর অনেক জলাশয় অতীতে শেষ হওয়ার ঘটনাও আছে। বর্তমান সরকার তা সুরক্ষিত করে পরিবেশবান্ধব একটি সুন্দর মহানগরী জনগণকে উপহার দিতে ইচ্ছুক। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীমুখো হওয়া লোকের সংখ্যা কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কারণ গ্রামবাংলায়ও উন্নয়নের জোয়ারে আধুনিকতার নতুন বলয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে। আমার শহর আমার গ্রাম এমন বার্তায় সারা বাংলাদেশে আলোকিত জগতে সম্প্রসারিত হওয়া খুব দূরে নয়। গ্রামের সঙ্গে শহরের পার্থক্য যতই কমে আসবে, ততই জনগণ তার নিজের জেলাকেই বসবাসের পছন্দের তালিকায় নিতে অনেক বেশি আগ্রহী হবে। সড়ক পরিবহন আইনবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আবারও সবাইকে সতর্ক এবং সাবধান করে দেন। নগরের যেসব জায়গায় ফুটওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস থাকবেÑ সেগুলোর ব্যবহারও প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরী। পথচারী এবং চালক কেউই সড়কের বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা করে না। সেটাও সচেতন দায়বদ্ধতায় সকলকে করতেই হবে। নিজের জানমাল এবং স্বপ্নের বাংলাদেশকে সুরক্ষিত রাখতে হবে প্রত্যেক নাগরিককে।
×