ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিটন আব্বাস

ক্রিকেটার তৈরির কারিগর রনি

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ক্রিকেটার তৈরির কারিগর রনি

প্রত্যেক মানুষের ভেতর বোধ হয় পৃথক পৃথক স্বপ্ন থাকে। কারোটা প্রকাশিত আবার কারোটা প্রচার পায় না। তাই বলে কাজ থেমে থাকে না। তেমনি একজন মানুষ শহিদুল আলম রনি। টগবগ এই তরুণ নিজ উদ্যোগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ঐতিহ্যবাহী এমএন পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত ২০১২ সাল থেকে ‘কুমারখালী ক্রিকেট কেয়ার একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করে সফল হয়েছেন। নিজ উদ্যোগে একাডেমি গড়ে মফস্বল, গ্রামের ছেলে-মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রজীবন থেকে শহিদুল আলম রনি নিজেও ক্রিকেট খেলেছেন। সেই ভালবাসা থেকেই রনির হৃদয়ে তরুণদের জন্য কিছু করার ভাবনা আসে। যার ফসল হিসেবে তিনি একাডেমি গড়ে তুলেছেন। ২০১৫ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে কুষ্টিয়ায় বেসরকারী চাকরি করছেন। বিয়েও করেছেন, সংসারে একটি সন্তানও আছে। চাকরি, সংসার সামলে এই তরুণ উদ্যমী স্বপ্নবাজ স্বপ্নে বহু মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করছেন। তাইতো চাকরি থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ এইসব কিশোর-কিশোরীদের ক্রিকেট খেলার বল, হেলমেট, গ্লোভস, প্যাডে খরচ করে থাকেন। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এ কাজ করে চলেছেন নীরবে-নিভৃতে। তাঁর একাডেমিতে বর্তমানে ৩৫জন ছেলেমেয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। নিজে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও তেমন সাফল্য বা সুযোগ ধরা দেয়নি। কিন্তু তার মধ্যে যে তাড়না, যে ক্ষুধা কাজ করছিল তা থেকে তার তৃষ্ণা বেড়ে গিয়েছিল। যে কারণে তার এই উদ্যোগে আজকের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে উৎকর্ষতা ছড়িয়েছে বোধ করি এই উদাহরণও কম নয়। তাঁর ক্রিকেট কেয়ার একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে ২০১৯-২০ মৌসুমে ঢাকার সূর্যতরুণ ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগে খেলছে মনির। ২০১৮ সালে যাত্রাবাড়ী ক্লাবের হয়ে, ২০১৭ সালে লালমাটিয়া ক্লাবের হয়ে রুহুল আমিন খেলেছেন দ্বিতীয় বিভাগ। ২০১৭ সালে ডিসিএর হয়ে তৃতীয় বিভাগে খেলেছেন আলিম রেজা। এছাড়া আলিম রেজা কুষ্টিয়া জেলা দলে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে খেলেছেন। রুহুল আমিনও ২০১৯ সালে জেলা দলের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। রনির ক্রিকেট কেয়ার একাডেমির সাফল্য খুব একটা না থাকলেও একবারে পিছিয়েও নেই। কুমারখালীতে মুজিববর্ষের টি২০ চাম্পিয়ানশিপে তাঁর ক্রিকেট কেয়ার একাডেমি কুষ্টিয়ার হাবিবুল বাশার সুমনের একাডেমিকে হারিয়েছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশারের দলকে হারিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে রনির ক্রিকেট কেয়ার একাডেমি। এছাড়াও ২০১৭-১৮ সালে কুষ্টিয়া জেলা জাতীয় স্কুল লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার একাডেমি। ২০১৭ সালে পোড়াদহ ক্রীড়া সংস্থার টি-২০ লীগে সেমিফাইনালে খেলে। ২০১৬ সালে কুষ্টিয়া প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগেও খেলেছে সেরা চারে। চলতি ২০২০ সালে মেয়ে ক্রিকেটার সাদিয়া খুলনা অঞ্চল থেকে বিকেএসপির সাতদিনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ডাক পেয়েছে। রনির ক্রিকেট কেয়ার একাডেমিতে বেশ ক’জন জেলা দলে অনুর্ধ ১৪-১৫-১৬-১৮ খেলেছে। তাদের মধ্যে সাজিদ, সিহাব, শান্ত, সিয়াম, শাওন অন্যতম। ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্পৃহা, আকাক্সক্ষা আর অনুপ্রেরণার যোগান ঘটলে যে কেউ বড় কিছু করতে পারবে। তারাও একদিন জাতীয় দলে খেলতে পারে; শুধু স্বপ্ন থেকে যাওয়া আর কঠোর পরিশ্রম করা। অনুর্ধ ১৯ দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেখিয়েছে এইটাই এখন বড় উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে। তরুণ রনিও বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য মেধা মনন দিয়ে কাজ করে চলেছেন। প্রান্তিক থেকে প্রতিভার দেখা মেলে, একেবারে গ্রাসরুট লেবেলের মেধাবী থেকে থাকলে তা হান্ট করে পরিচর্যা করে জেলা দলে দিলে প্রতিযোগিতাময়ী হয়ে উপরে যেতে পারে। যেহেতু জেলা পর্যায়ে নিয়মিত খেলা হয়। মফস্বল, গ্রামের ছেলে-মেয়েদের সুযোগ কম থাকায় শহিদুল রনি কুমারখালী উপজেলা পর্যায়ে এ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল বড়ো ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় পেরে না উঠলেও এইসব কিশোর কিশোরীদের নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করাই উদ্দেশ্য। নিজে কোচিং করান এই স্বপ্নবান তরুণ। তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অধীনে কোচিং প্রশিক্ষণ নিয়ে কোচ হিসেবে পেশাদার হতে চান। আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার ৭ বছর আরও দীর্ঘ হবে। একান্তই নিজ উদ্যোগে মহতী এমন কাজ করে চলা শহিদুল রনি জানিয়েছেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিজের কাজের পরিধি আরও বাড়াবেন। বড় পরিসরে কাজ করবেন দেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য।
×