ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বরূপে ফিরলেন সিমোনা

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

স্বরূপে ফিরলেন সিমোনা

গত বছরের জুলাইয়ে সর্বশেষ কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন সিমোনা হ্যালেপ। সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। এরপর নিজেকে আর সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি রোমানিয়ান তারকা। কানাডিয়ান ওপেন, সিনসিনাটি মাস্টার্স, ইউএস ওপেন, উহান-চায়না কিংবা নতুন মৌসুমের শুরুতেও নিষ্প্রভ ছিলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। তারপরও হাল ছাড়েননি সিমোনা হ্যালেপ। এবার তারই পুরস্কার পেলেন রোমানিয়ান তারকা। দুর্দান্ত খেলেই দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। শনিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে সিমোনা হ্যালেপ দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এলিনা রিবাকিনাকে হারিয়ে নতুন বছরের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ পান। টুর্নামেন্টের শীর্ষ বাছাই হ্যালেপ এদিন কঠিন লড়াইয়ের পর ৩-৬, ৬-৩ এবং ৭-৬ (৭/৫) ব্যবধানে পরাজিত করেন রাশিয়ান বংশোদ্ভূত কাজাখ তারকাকে। সেইসঙ্গে দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন তিনি। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সিমোনা হ্যালেপ। দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারও এই টুর্নামেন্টের শিরোপা পুনরুদ্ধার করলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান এই তারকা। দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপের এটা ছিল ২০তম আসর। যে কারণে সবার কাছেই এটা ছিল স্পেশাল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর হ্যালেপও জানালেন তা। এ প্রসঙ্গে শিরোপা জেতার পর রোমানিয়ান তারকা বলেন, ‘২০২০ সালে ২০তম বার্ষিকীতে ক্যারিয়ারের ২০তম শিরোপা। আমার কাছে এটা স্পেশাল। এখন আমি উপভোগ করতে চাই। আমার কাছে এটা অবশ্যই স্পেশাল।’ চলতি মৌসুমে এটা হ্যালেপের তৃতীয় টুর্নামেন্ট। শুরুটা করেছিলেন এ্যাডিলেড দিয়ে। যেখানে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। নতুন বছরের প্রথম টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেন ২৮ বছরের এই তারকা খেলোয়াড়। এ্যাডিলেডের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলারুশ সুন্দরী এ্যারিনা সাবালেঙ্কার কাছে হেরে ভক্ত-অনুরাগীদের হতাশ করেন তিনি। এরপর নতুন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। মেলবোর্নে অবশ্য বেশ ভালই খেলছিলেন দুটি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। কিন্তু সেমিফাইনালেই তাকে থামিয়ে দেন স্প্যানিশ টেনিস তারকা গারবিন মুগুরুজা। দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য তাকে কেউ থামাতে পারেনি। শুরু থেকেই ধারাবাহিক পারফর্মেন্স উপহার দেন তিনি। টানা চার ম্যাচে দুরন্ত জয় তুলে নেন এই রোমানিয়ান তারকা। শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা উনস জেবিয়ারের বিপক্ষে জয় দিয়ে। এরপর এ্যারিনা সাবালেঙ্কার বিপক্ষেও জয়। সেইসঙ্গে এ্যাডিলেডে হারের প্রতিশোধটাও দারুণভাবে নিয়ে নিলেন বর্তমান টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে থাকা সিমোনা হ্যালেপ। সেমিফাইনালের ম্যাচে জেনিফার ব্র্যাডিকেও উড়িয়ে দেন তিনি। ফাইনালে রিবাকিনার বিপক্ষে দারুণ জয়ের সৌজন্যেই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হন হ্যালেপ। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের ২০তম ডব্লিউটিএ শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়েন তিনি। দুবাইয়ের শিরোপা জিতে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার রেকর্ডেও ভাগ বসালেন হ্যালেপ। সক্রিয় খেলোয়াড়দের মধ্যে আজারেঙ্কা-হ্যালেপের উভয়ের শিরোপার সংখ্যাই এখন সমান ২০টি করে। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত হ্যালেপ। এই তালিকায় সবার উপরে রয়েছেন আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস। তারপরেই উইলিয়ামস পরিবারের বড় মেয়ে ভেনাস উইলিয়ামস। তৃতীয় স্থানে অবস্থান সম্প্রতি টেনিসে ফেরা কিম ক্লাইস্টার্স। চতুর্থ আর পঞ্চম স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে মারিয়া শারাপোভা এবং পেত্রা কেভিতোভা। দীর্ঘদিন পর দুবাইয়ের ট্রফি পুনরুদ্ধার করে দারুণ রোমাঞ্চিত হ্যালেপ। তবে এবার দুবাইয়ে কোর্টে নামার আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিলেন রোমানিয়ান তারকা। চেয়েছিলেন ট্রফিটা নিজের শোকেসেই তুলতে। শেষ পর্যন্ত সেটাই করলেন উইম্বলডনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। রিবাকিনাকে হারানোর পর উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসতে থাকা সিমোনা হ্যালেপ বলেন, ‘অনেক কঠিন লড়াই করেছি। তাছাড়া এই টুর্নামেন্ট জয়ের লক্ষ্য নিয়েই কোর্টে নেমেছিলাম। এই মুহূর্তে আমার আবেগটাও পাগলাটে। কেননা দুর্দান্ত একটা ম্যাচ খেলেছি।’ গত বছর থেকেই বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন এলিনা রিবাকিনা। এ বছরেও টেনিস কোর্টে আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। এই মুহূর্তে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৯ নম্বরে অবস্থান করছেন তিনি। নতুন মৌসুমে ইতোমধ্যেই চার টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছেন রিবাকিনা। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন হোবার্ট ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্টে। কিন্তু শেনঝেন ও সেন্ট পিটার্সবার্গ ওপেনে তীরে এসে তরী ডুবে যায় তার। এবার দুবাইয়ের গল্পটাও অভিন্ন। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে হারার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে কোর্ট ছাড়তে হয় তাকে। তথাপি রিবাকিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হ্যালেপ। এ প্রসঙ্গে রোমানিয়ান তারকা বলেন, ‘এখনও রিবাকিনা বয়সে খুব তরুণ। টেনিসে তার সামনে এখনও অনেক সময় অপেক্ষা করছে।’ হ্যালেপ এখানেই থামেননি। প্রতিপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করে রোমানিয়ান তারকা এ সময় আরও বলেন, ‘সে খুব শক্তিশালী খেলোয়াড়। তার সার্ভও দুর্দান্ত। লম্বা হওয়ার কারণে তার শক্তিমত্তাটা বেশি। আমি মনে করি, খুব দ্রুতই সে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে উঠে আসবে। গত ছয়-সাত বছরে আমি নিজেও অনেক ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করেছি। এই সময়টাতে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচ ও শীর্ষ দশে থেকেছি, যা মোটেও সহজ ছিল না। আমার কাজটা খুব ভালভাবে করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।’ নিজের গত সপ্তাহের পারফর্মেন্সে নিয়েও মুগ্ধ বিমোহিত হ্যালেপ। তিনি বলেন, ‘দুবাইয়ে খেলাটা কিছুটা কঠিন ছিল। কারণ আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু শিরোপা জিততে হলে আপনাকে প্রতিটি বলের জন্যই লড়াই করতে হবে। সে হিসেবে আমি বলব এই সপ্তাহে আমার নিজের সেরাটাই ঢেলে দিয়েছি টেনিস কোর্টে।’
×