ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশের জয় ইনিংস ও ১০৬ রানে, ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিম

সাড়ে তিন দিনেই কুপোকাত জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সাড়ে তিন দিনেই কুপোকাত জিম্বাবুইয়ে

মিথুন আশরাফ ॥ সাড়ে তিন দিনেই কুপোকাত হয়ে গেল জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশ সফরে এসে একমাত্র টেস্টটি নিয়ে অনেক উচ্চৈস্বরে কথা বলেছিলেন জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা। নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সর্বশেষ সিরিজে ভাল খেলায় বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়ার উচ্চাকাক্সক্ষাও দেখেছিলেন জিম্বাবুইয়ানরা। কিন্তু হলো টা কী? ইনিংস ও ১০৬ রানে হার হলো। জিম্বাবুইয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর শান্তি কুড়িয়ে নিল বাংলাদেশ। পাঁচদিনের টেস্ট দেড়দিন আগেই শেষ হয়ে গেল। মুমিনুল হকের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ও পেল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিম (২০৩*) যখন দ্বিশতক করেন আর মুমিনুল হক (১৩২) শতক করেন, সেখানেই আসলে টেস্ট বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৫৬০ রানের বড় স্কোর যে গড়া হয়ে যায়। টেস্টজুড়ে এক টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা স্পিনার নাঈম হাসানের (মোট ৯ উইকেট, ৪/৭০ ও ৫/৮২) স্পিন জাদুতেই ইনিংস হার থেকে রক্ষা পাওয়ার সব আশা শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ের। তাইজুল ইসলামের (মোট ৬ উইকেট, ২/৯০ ও ৪/৭৮) দুর্দান্ত বোলিং ও প্রথম ইনিংসে আবু জায়েদ রাহীও (৪/৭১) সুইং ভেল্কি দেখিয়ে দেন। তাতে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। জিম্বাবুইয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন (১০৭) প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়তে পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ৪৩ রানের বেশি করতে পারেননি সেখানেই ইনিংস হারের খপ্পরে পড়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রান করার পর তৃতীয়দিন একেবারে শেষবেলায় দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেট হারিয়ে ৯ রান করে দিন শেষ করে জিম্বাবুইয়ে। তখনও ২৮৬ রানে পিছিয়ে থাকে। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের বেহাল দশার পর পিছিয়ে থাকা রানই করে যে ইনিংস হার এড়াতে পারবে না জিম্বাবুইয়ে তা তৃতীয়দিনেই ধারণা করা হয়। চতুর্থদিনেই যে খেলা শেষ হয়ে যাবে তাও বোঝা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তাই হয়। ১৮৯ রানের বেশি করতেই পারল না জিম্বাবুইয়ে। ২০১৮ সালের নবেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের পর মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নেন নাঈম। তাইজুল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করেন। প্রথম ইনিংস শেষেই বাংলাদেশ ২৯৫ রানে এগিয়ে যায়। এরপর জিম্বাবুইয়ে তৃতীয়দিনে ৯ রান করলে চতুর্থদিনে খেলতে নামার আগেই ২৮৬ রানে পিছিয়ে থাকে। এই রান করে আগে ইনিংস হার এড়াতে হলে ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতে হতো। কোন ব্যাটসম্যানই তা করতে পারেননি। আসলে নাঈম এমনই স্পিন দ্যুতি ছড়ান তাতে ছারখার হয়ে যান জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ইনিংসে নাঈমের সঙ্গে তাইজুলও ঝলক দেখিয়ে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতেই দেননি। প্রথম সেশনেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুইয়ে। কেভিন কাসুজা (১০), ব্রেন্ডন টেইলর (১৭) দ্রুতই ক্যাচ আউট হওয়ার পর আরভিন একবার নিজের ৪২ রানে ‘নতুন জীবন’ পেয়েও আর এক রান যোগ করতেই রান আউট হয়ে যান। দলের ৪৪ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর আরভিন ও সিকান্দার রাজা মিলে একটু এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলের ১০৪ রান হতেই পঞ্চম উইকেটে সিকান্দারের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি গড়ে রান আউট হয়ে যান আরভিন। এমনভাবে ব্যাটিং করছিলেন আরভিন যেন টেস্ট নয়, ওয়ানডে খেলতে নেমেছেন। রান তাড়া করতে নেমেছেন। ৪৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ রান করে ফেলেন। যা জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান হয়ে থাকে। এর বেশি আর এগিয়ে যেতে পারেননি আরভিন। এভাবে খেললে কী আর টেস্টে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া যায়? রান নিতে গিয়ে মুমিনুলের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন আরভিন। জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক আউট হতেই যেন তাদের অলআউট হওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম সেশন অতিক্রম করে যখন দ্বিতীয় সেশনে খেলতে নামে জিম্বাবুইয়ে, তৃতীয় সেশনে আর নামতে পারেননি জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। স্পিন দাপটেই দ্বিতীয় ইনিংস দ্রুত শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ের। আরভিন আউটের পর এমনই এলোমেলো হয়ে পড়ে জিম্বাবুইয়ে, ৮৫ রানেই শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা। নাঈম ও তাইজুল এমনই ঘূর্ণি মায়ার জালে আটকে ফেলেন, টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। দ্বিতীয় সেশন শুরু হতেই সিকান্দারকে (৩৭) আউট করে দেন তাইজুল। এরপর রেগিস চাকাভার (১৮) চেষ্টাও তাইজুলের স্পিন ভেল্কিতে ম্লান হয়। টিমিসেন মারুমা (৪১) বাকিদের তুলনায় নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টায় সফল হন বলাই যায়। তবে নাঈমের স্পিনের কাছে হার মানেন মারুমা। এর আগে এ্যান্সলি এনডিলোভুকেও (৪) সাজঘরে পাঠিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট শিকার করে নেন নাঈম। আর ১০ মিনিট খেলতে পারলেই দ্বিতীয় সেশনও অতিক্রম করতে পারবে জিম্বাবুইয়ে। তখন জয় পেতে আরও অপেক্ষা বাড়বে। এমন মুহূর্তে তাইজুল আবারও উইকেট শিকার করেন। এবার চার্লটন টিসুমাকে (৩) এলবিডব্লিউ করে দিয়ে জিম্বাবুইয়েকে অলআউটই করে দেন তাইজুল। তাতে করে ১৮৯ রানের বেশি করতেও পারেনি জিম্বাবুইয়ে। প্রথম সেশনে যে রান করেছিল জিম্বাবুইয়ে, দ্বিতীয় সেশনে তারচেয়ে আরও ৭৬ রান কম করে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে বাংলাদেশকে হারানোর অনেক আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছিল টেস্টের আগে ক্রিকেটারদের মুখে। মাঠের খেলায় উড়েই গেল জিম্বাবুইয়ে। স্পিন খেলায় অভিজ্ঞ বাংলাদেশকে চাপে রাখবে। এতসব কথার কিছুই মাঠে দেখা গেল না। বাংলাদেশকে এক ইনিংসের বেশি খেলতেই হলো না। বাংলাদেশের কাছে জিম্বাবুইয়ে যে এখনও কেমন দল তা প্রমাণও হয়ে গেল। ‘যত গর্জে, তত বর্ষে না’Ñ এই কথা জিম্বাবুইয়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো। বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ইনিংস ব্যবধানে জয় পেল। ২০১৮ সালের নবেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়ে প্রথমবার ইনিংস ব্যবধানে জেতার স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এক বছর যেতেই আবার সেই শান্তি মিলল। গত বছর থেকে টানা ছয় টেস্ট হারের পর জয় মিলল বাংলাদেশের। নতুন বছরে নিজ দেশে প্রথম টেস্টেই জয় মিলল। মুমিনুল গত বছর ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব পান। সেই থেকে টানা তিন টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে সবকটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার দেখেন। অবশেষে হারের বৃত্ত ভাঙ্গা হলো। সেই জয়টিও আসল আবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ইনিংস ব্যবধানে জিতেই।
×