ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মান মন্ত্রীর সাক্ষাত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে জার্মানিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য এক বিরাট বোঝা এবং তারা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। মিয়ানমারকে দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যেতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে জার্মানিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও ভূমিকা নেয়ার অনুরোধ করেন। মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে জার্মানির সফররত অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. গার্ড মুলার সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি একথা বলেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের এ সম্পর্কে অবহিত করেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার আগমন কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হয়েছে, কেননা তারা সংখ্যায় স্থানীয় জনগণকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, অনেকেই (রোহিঙ্গারা) নিজেদের সন্ত্রাস এবং মানবপাচারে জড়িয়ে ফেলার সুযোগ নিচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ছাড়াও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যাতে করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এরপর মিয়ানমার আর রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না এবং তারা চুক্তিও মানছে না’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা পরিবারে নবীন সদস্য রয়েছে, যারা তাদের পিতা-মাতাকে হারিয়েছে‘ কাজেই খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা সন্ত্রাসে জড়াচ্ছে এবং মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ছে। ‘তাদের এবং আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই আমরা রোহিঙ্গা শিবিরের চারপাশে বেড়া নির্মাণ করছি’। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সকল প্রকারের সাহায্য প্রদান করছে। ওই এলাকার নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। জার্মান মন্ত্রী বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরও কিভাবে যুক্ত হতে এবং বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে তা বিবেচনা করবে। ড. মুলার প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তিনি আগামীকাল রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন। ‘আমি মনে করি তাদের নির্বাচনের পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং জার্মান মন্ত্রী বৈঠকে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। এরমধ্যে রয়েছে- জার্মান বিনিয়োগ, তৈরি পোশাক শিল্প, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, পানি শোধন প্রকল্প এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়। বাংলাদেশে তার দেশের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে যখন জার্মান মন্ত্রী বলছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। ‘জার্মানি চাইলে তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এ সময় তিনি জার্মান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান। ড. মুলার প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল গার্মেন্টস কারখানা আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করছে। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপনকালে জার্মান চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই সে সময় বাংলাদেশ সফরের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’ আগামী নবেম্বরে জার্মান চ্যান্সেলর অবসরে যাবেন বলেও জার্মান মন্ত্রী উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (চ্যান্সেলর) অবসরের আগেই মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং এখানকার রোহিঙ্গা ইস্যু দেখার জন্য তার অবশ্যই বাংলাদেশ সফর করা উচিত।’ ড. মুলার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি আপনার দেশে আপনার বাবার মতোই ব্যাপক জনপ্রিয়।’ বৈঠকের শুরুতে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো পুনর্নির্বাচিত হয়ে প্রধানন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করায় জার্মান মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। তিনি মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ও বাংলাদেশের জনগণ এবং প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ডিরেক্টর জেনারেল অব হেড অব মিডিলইস্ট, এশিয়া, সাউথইস্ট এ্যান্ড ইউরোপ দ্য মিনিস্ট্রি অব ইকোনমিক কো-অপারেশন ইন জার্মানি ড. ক্লদিয়া ওয়ার্নিং এবং ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফরনহোল্টজ এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
×