ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতাল নিজেই এখন রোগী

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

হাসপাতাল নিজেই এখন রোগী

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ “মোগো রোগ সারাইবে কি? হাসপাতালের রোগ সারানোরই কেউ নেই” এভাবেই হতাশা জড়িত কন্ঠে কথাটি বললেন চাখার ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের স্মৃতি বিজড়িত চাখার ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন, চিকিৎসক ও নার্সদের কোয়ার্টার (বাস ভবন) দুটি জরাজীর্ণ হয়ে পরেছে। ছাদ থেকে খসে পরা কংক্রিট আর পলেস্তরার হাত থেকে রক্ষা পেতে ডাক্তার, নার্স ও রোগীরা সবসময় আতঙ্কে থাকেন। সবমিলিয়ে হাসপাতালের দুটি ভবনই এখন রোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের মূল ভনটির ভগ্নদশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা ধ্বসে পরে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। সূত্রমতে, বাংলার বাঘখ্যাত শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হককে কেন্দ্র করে বৃটিশ শাসন আমলে বানারীপাড়া উপজেলার অজোপাড়া গাঁ চাখার গ্রামে গড়ে উঠেছিল শহর সাদৃশ্য এলাকা। ১৯৪০ সালে চাখার ফজলুল হক কলেজ স্থাপিত হওয়ায় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের লেখাপড়ার কেন্দ্র বিন্দু ছিলো চাখার। পরে ওই কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়। এখানে একটি শহরের আদলে গড়া চাখারে গড়ে উঠেছে বালক ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। রয়েছে ডাকবাংলো, পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবরেজিষ্ট্রি অফিস, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ব্যাংক, বীমা, এনজিও অফিস ও শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর। তারই ধারাবাহিকতায় আশির দশকের প্রথমার্ধে জনগুরুত্বপূর্ণ চাখারে প্রতিষ্ঠা করা হয় ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল। বর্তমানে হাসপাতালের দ্বিতল ভবনটির বিভিন্নস্থানে দেখা দিয়েছে ফাঁটল, খসে পরছে পলেস্তরা। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুইয়ে ভিতরে পানি পরে একাকার হয়ে যায়। এরই মাঝে দীর্ঘদিন থেকে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই হাসপাতালে একজন চিকিৎসক, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, দুইজন নার্স, ফার্মাসিষ্ট ও দুইজন বাবুর্চিসহ রয়েছে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার। গত কয়েকবছর ধরে হাসপাতালের ভবনের যা অবস্থা তাতে এখানে কোন রোগী রাখা যায়না। তার পরেও যাদের কোথাও যাওয়ার উপায় থাকেনা তারাই একান্ত নিরুপায় হয়ে এখানে ভর্তি হয়ে থাকেন। হাসপাতালে সার্বক্ষনিক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন মেডিকেল অফিসার ডাঃ উম্মে সালমা, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার তাসলিমা খানম ও ফার্মাসিষ্ট হাসনাইনসহ অন্যান্য ষ্টাফরা। চাখার হাসপাতালে সরকারী ওষুধ সরবরাহ ভাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের বাসভবনের অবস্থা আরও করুন হয়ে পরেছে। সেখানে পলেস্তরা খসে পরে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে ছাদের নিচে সামিয়ানা টানানো হয়েছে। যার ওপর বৃষ্টির পানি ঠেকাতে পলিথিন টানানো রয়েছে। এরইমধ্যে স্ব-পরিবারে বাস করছেন একজন নার্স। হাসপাতাল ও কোয়ার্টারের পয়োঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকছেন না চিকিৎসক। একান্ত নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি থাকার কথা জেনেও এখানে ২/১ জন রোগী ভর্তি হন। এ ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম কবির হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, চাখারের হাসপাতাল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষনা করার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ছবি তুলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তার পরেও কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দুটিকে মেরামত করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ওই ভবন মেরামত করানোর কোন মানে হয়না কিন্তু তাদের (কর্মকর্তা) তা বোঝানো যাচ্ছেনা। তিনি ওই ভবন দুটি ভেঙ্গে নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।
×