ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনাভাইরাস ॥ ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪০০

প্রকাশিত: ০১:০২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনাভাইরাস ॥ ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪০০

অনলাইন ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রকোপ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আন্তর্জাতিকভাবে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরও ইতালিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৪০০ জনে ঠেকেছে। গোটা ইউরোপে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইতালি। এই দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ইতালিতে সনাক্ত নতুন আক্রান্তের খবর ঘোষণা দিয়েছে। বুধবারও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায় যে প্রথমবারের মতো ভাইরাসটি চীনের বাইরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে এই ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করেছিল। গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী, প্রায় ৪০টি দেশের আশি হাজারেরও বেশি মানুষ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যক চীনের বাসিন্দা। কোভিড-১৯, নামে এই ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, এ পর্যন্ত ২,৭০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইতালির পরিস্থিতি কী? বুধবার দিনশেষে, কর্তৃপক্ষ মোট ৪০০জন আক্রান্তের খবর প্রকাশ করে - মঙ্গলবার রাতের পর এই আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ জনের মতো বৃদ্ধি পেলো। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে এর উত্তরের শিল্পাঞ্চল - মিলানের আশেপাশের এলাকা, লম্বার্ডি, এবং ভেনিসের কাছে ভেনেটো শহরে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। এতে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১২জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সরকারি কর্মকর্তারা জনসাধারণকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন এবং রোগের বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে এবং বেশ কয়েকটি পাবলিক ইভেন্ট বাতিল করা হয়েছে। প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এগারোটি শহরের - মোট ৫৫,০০০ বাসিন্দাকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে যে এই প্রাদুর্ভাবের ফলে ইতালি অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে পারে। মিলানে বিবিসির মার্ক লোভেন জানিয়েছেন, শহরের ক্যাফেগুলো জনশূন্য থাকায় এবং অনেক হোটেলের বুকিং বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইইউর স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কিরিয়াকাইডস, রোমে ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পরে সাংবাদিকদের বলেন: "এটি উদ্বেগজনক একটি পরিস্থিতি, তবে আমাদের অবশ্যই আতঙ্কিত হয়ে হালা ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।" "এই ভাইরাসটি সম্পর্কে এখনও অনেক বিষয় অজানা রয়ে গেছে। বিশেষত এর উৎস এবং এটি কীভাবে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।" ইউরোপ এবং এর বাইরের পরিস্থিতি কেমন? গত দুই দিনে অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, জর্জিয়া এবং উত্তর ম্যাসেডোনিয়া তাদের প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতালিতে থাকা মানুষের সংস্পর্শে ছিলেন। স্পেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিতে আরও কয়েকজন আক্রান্তের সংখ্যা ঘোষণা করা হয়। ডাবলিনে ৭ ও ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইতালির সাথে ছয় জাতির রাগবি ম্যাচ পিছিয়ে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড। যুক্তরাজ্যে, এখন পর্যন্ত ১৩ জন আক্রান্তের খবর রিপোর্ট করা হয়েছে, করোনাভাইরাস সনাক্তের পরীক্ষা বাড়ানো হচ্ছে যাতে লোকেরা ফ্লুর মতো লক্ষ্মণ দেখা দিলেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন। ইউরোপের বাইরে, আলজেরিয়া, ব্রাজিল এবং পাকিস্তানও তাদের প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর জানিয়েছে। ব্রাজিলিয়ান আক্রান্তের খবরটি লাতিন আমেরিকায় এই ভাইরাসের প্রবেশের বিষয়টি সামনে এনেছে। ইরান - মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান হটস্পট - গত সপ্তাহে দেশটিতে মোট ১৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং ১৩৯জন আক্রান্তের খবর প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার দেশটির সরকার জানিয়েছে যে, কোন শহর ও শহরতলীকে আলাদা করে রাখার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও তারা এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ইরানি কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষকে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল 'কওম' শহরে না যাওয়ার জন্য বলেছে, তবে তারা এখনও সেখানকার কোন মাজার বন্ধ করেনি। এই মাজারগুলোয় প্রতি বছর লাখ লাখ শিয়া তীর্থযাত্রীরা ভিড় করেন। চীনের বাইরে সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ায় বুধবার পর্যন্ত মোট ১২০০ জন সংক্রমিত এবং ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মহামারী অনিবার্য নয় ফিলিপা রক্সবি, বিবিসির স্বাস্থ্য প্রতিবেদক করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র ধীরে ধীরে চীন থেকে সরে পুরো বিশ্বে এসে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত ইউরোপে। এই পরিস্থিতিতে খারাপ সংবাদের মতো মনে হলেও এর ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যার দিকে চীনের অবস্থান শীর্ষে হলেও প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে। এটি ইঙ্গিত করে যে, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে দেশটির লোকজনকে বাড়িতে থাকার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, জনসমাগমস্থলে না যেতে এবং ভ্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেই প্রচেষ্টা কাজে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, চাইলে এখনও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এবং এই ভাইরাসের সংক্রমণ যে বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার নেবে সেটাও অনিবার্য নয়। এই প্রাদুর্ভাবের ফলে যুক্তরাজ্য সরকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছে। জনসাধারণকে নিরাপদ রাখার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন হলেও সেটা যেন অবশ্যই ভারসাম্যপূর্ণ ও দায়িত্বশীল উপায়ে হয়। সূত্র- বিবিসি বাংলা
×