ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুরে বিষমুক্ত সবজি চাষ

নিরাপদ সবজি গ্রাম

প্রকাশিত: ০৮:০১, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 নিরাপদ সবজি গ্রাম

বর্তমান সময়ে রাসায়নিকমুক্ত শাক-সবজি খাওয়ার কথা ভাবা হলেও তা মিলানো প্রায় অসম্ভব। কৃষকরাও অর্গানিকভাবে সবজি চাষ করতে চান না। তবে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামের কিষাণ-কিষানিরা। দুই গ্রামের তিন শতাধিক চাষী ১১০ হেক্টর জমিতে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ পদ্ধতিতে শাক-সবজি আবাদ করছেন। এই চাষ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নিরাপদ সবজির চাহিদা বেশি। দামও ভাল। তাই নিজেদের আয়ের পাশাপাশি মানুষকে বিষমুক্ত শাক-সবজি খাওয়াতে পারার কথা ভেবে চাষীরাও খুশি। খুলনা জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়। সারা বছর ধরেই এই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে শীত মৌসুম (রবিশস্য) ও গ্রীষ্ম মৌসুমে (খরিপ মৌসুম) ব্যাপক সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া গ্রাম ও সাহস ইউনিয়নের গজেন্দ্রপুর এই দুটি গ্রামের চাষীরা অর্গানিক (নিরাপদ) সবজি আবাদ করে চাষীরা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বাজারে বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামের সবজির বিশেষ চাহিদাও রয়েছে। সেই চাহিদার আলোকে চাষীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে অর্গানিক সবজি আবাদে উৎসাহী হচ্ছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে তারা এখন সবজিতে সরাসরি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন না। তারা ফসলে পরিমিত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ, পার্চিং পদ্ধতি, আলোক ফাঁদ ও হলুদ বোর্ড ক্ষেতে ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করছেন। তাছাড়া সবজি বাজারে তোলার আগে সেটির নিরাপদ কাল পরীক্ষা করেই তবে সেগুলো বাজারে তুলছেন। কৃষকদের এই প্রচেষ্টার কারণে গ্রাম দুটি এখন ‘নিরাপদ সবজির গ্রাম’ বা ‘অরগানিক কৃষিগ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। সরেজমিন বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক সবজির ক্ষেতে ভরা। কৃষকরা ব্যস্ত ক্ষেতের পরিচর্যা নিয়ে। চাষীরা জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ দুটি গ্রামে চাষাবাদ হচ্ছে নানা রকম সবজি। বর্তমানে জমিতে রয়েছে শিম, টমেটো, ফুলকপি, খিরা, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, মুলা, ধনেপাতা, বেগুন ইত্যাদি। গ্রীষ্ম মৌসুমের জন্য চাষ হচ্ছে বরবটি, শশা, ঝিঙ্গে, চিচিঙ্গা, ডাটা শাকসহ অন্যান্য সবজি। চাষ করা হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন টমেটো। জমিতে বরবটি ক্ষেতে সেচ দিচ্ছিলেন বরাতিয়া গ্রামের নিখিল কুমার নন্দী। তিনি বলেন, আগে আমরা না বুঝে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার ও ফসলে কীটনাশক স্প্রে করতাম। কিন্তু আমরা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে জানতামনা। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে জানতে পারি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগে জমির ফসল বিষে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। তাই তিনি নিরাপদ সবজি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ১২ বিঘা জমিতে নানারকম সবজির আবাদ করেছেন। গজেন্দ্রপুর গ্রামের সবজি চাষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী এলাকায় তিনিসহ অনেকে নিরাপদ সবজি চাষ শুরু করছেন। তিনি বলেন, বিষমুক্ত সবজির চাহিদা বেশি, দামও ভাল। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন জানান, নিরাপদ কৃষি গ্রাম হচ্ছে একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকে বিষমুক্ত করতেই এই উদ্যোগ। এতে কৃষকের অনেক সাড়া মিলছে। তিনি বলেন, বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামে তিন শতাধিক চাষী ১১০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করছেন। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, হেক্টর প্রতি সবজির গড় উৎপাদন ২০ মেট্রিক টন এবং প্রতি টনের মূল্য গড়ে ২৫ হাজার টাকা। এ হিসেবে ১১০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজির উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। যা থেকে কৃষকেরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলায় দুটি গ্রামকে নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করাসহ একটি গ্রামকে নিরাপদ ফল গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামকে নিরাপদ সবজি গ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া জেলার অন্য আটটি উপজেলায় নিরাপদ সবজি উৎপাদন করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষক গ্রুপ, উঠান বৈঠকসহ হাতে-কলমে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শও প্রদান করা হচ্ছে। এতে কৃষকেরা নিরাপদ ফসল উৎপাদনে আকৃষ্ট হচ্ছে। -অমল সাহা, খুলনা অফিস থেকে
×