ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়ীদের স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সঞ্চয়ীদের স্বস্তি

মাত্র দু’সপ্তাহ আগে একটি ঘোষণার ফলে মাথায় হাত পড়েছিল মধ্যবিত্তের, বিশেষ করে স্বল্প অঙ্কের সঞ্চয়ীদের। ডাকঘর সঞ্চয়ে আমানতের সুদহার ব্যাপকভাবে কমানোর সিদ্ধান্তটি এসেছিল। তিন ধরনের সঞ্চয়ী আমানতের ক্ষেত্রে যে সুদের হার প্রচলিত ছিল তা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। স্মরণকালে আমানতের ক্ষেত্রে এত বেশি হারে আর কোন সুদের হার কমানো হয়নি। সুদের হার যা ধার্য করা হয়েছিল তা এমন : এক বছর মেয়াদী সঞ্চয়ে ৪, দুই বছর মেয়াদী সাড়ে ৪ ও তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয়ী আমানতে ৫ শতাংশ সুদ পাওয়া যাবে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর বুধবার অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদ অপরিবর্তিত থাকবে। এটি সঞ্চয়ীদের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তিকর। ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ ও যৌথনামে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার কোটি টাকা। আর তিন বছর মেয়াদী আমানত হিসেবে ডাকঘরে মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। আচমকা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পরে সেটি থেকে পিছিয়ে আসাÑ পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করলে অনেকের কাছে এমন বার্তা যাওয়া অসম্ভব নয় যে, সরকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার নীতি গ্রহণ করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর কথা হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন মহল এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে সুদের হার না কমিয়ে সুদের ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে। এটিও যে শুধু সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে জীবন নির্বাহের ব্যয় বহনকারী অবসরপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে সেটি বলাই বাহুল্য। দেশের বিদ্যমান আর্থিক কাঠামোর সঞ্চয়পত্র বিপুল এক জনগোষ্ঠীর অন্যতম আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া নির্ভরযোগ্য বিকল্প কোন ক্ষেত্র নেই। পুঁজিবাজারের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই ভরসা করে না। পোর্টফলিও বিনিয়োগও সম্প্রতি কমে যাচ্ছে। সেখানে সাধারণ মানুষ বিনিয়োগ করবে কোন্্ ভরসায়? মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর দর ফেসভ্যালুর অর্ধেক। বন্ড বাজার বিকশিত হয়নি। ব্যাংকগুলোয় ঋণখেলাপীদের ভিড়। এদিকে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ কোথায় বিনিয়োগ করবে? আলোচিত ওই সঞ্চয় স্কিমে মূলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ছোট ছোট আমানত রাখেন। এখানে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মতো খুব বেশি বিনিয়োগ আসে না। মূলত যারা ব্যাংকে আমানত রাখেন না তারাই ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ করেন। এ খাতের সুদহার কমালে নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটি জানা কথা। এটিই ছিল দুশ্চিন্তার বিষয়। দায়িত্বশীল পদে যারা থাকেন তাদের যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয় অনেক ভেবেচিন্তে, এর সম্ভাব্য ইতিবাচক ও বিরূপ ফল এবং প্রতিক্রিয়াগুলো মনে রেখে। কেননা, একবার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আবার স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সেটিতে পরিবর্তন আনলে এ নিয়ে বিরূপ আলোচনার সূত্রপাতের আশঙ্কা থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই পূর্বাপর ভেবে নানামুখী পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় এনে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণই প্রত্যাশিত। সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রতিকূলে যায় এমন কোন সিদ্ধান্ত গণমুখী সরকারের একজন মন্ত্রীর কাছে দেশবাসী কখনই যে প্রত্যাশা করেন না সেটি সংশ্লিষ্টতেরও অনুধাবন করতে হবে।
×