ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে যত্রতত্র ইটভাঁটি

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 পঞ্চগড়ে যত্রতত্র ইটভাঁটি

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাঁটি। প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে এসব ইটভাঁটি গড়ে তোলায় কৃষি, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়েছে এই জেলার দুটি উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অধিকাংশ ভাঁটির অনুমোদন না থাকলেও জেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। জানা গেছে, নিয়ম-নীতি না মেনেই যেখানে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন ইটভাঁটি। হারিয়ে যাচ্ছে আবাদী জমি। এসব নতুন ইটভাঁটির নেই প্রশাসনের লিখিত ছাড়পত্র। এমনকি পরিবেশ অধিদফতরেরও নেই অনুমোদন। এক শ্রেণীর অসাধু এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ভাঁটির মালিক সরকারী বিধিমালা না মেনে এসব ভাঁটি গড়ে তুলছেন। অবৈধ এই ভাঁটিগুলোর প্রভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। আবাদী জমির টপসয়েল কেটে ইট বানানোর ফলে নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি। স্কুল কলেজের পাশেই রাস্তা সংলগ্ন এসব ভাঁটির ধুলোবালি এবং কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে প্রতিটি ইটভাঁটি প্রতিবছর কমপক্ষে ৮০-৯০ লাখ ইট পোড়ানো হচ্ছে। অধিকাংশ ভাঁটিতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে কমে যাচ্ছে গাছপালা। কৃষকের আবাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কালো ধোঁয়া এবং আগুনের তাপে গাছপালা মরে যাচ্ছে। আশপাশের জমিতে কোন ফসলই হচ্ছে না। ইটভাঁটি মালিকেরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ বা অভিযোগও করার সাহস পাচ্ছেন না। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আবু হানিফ বলেন ফসলি জমিতেই ইটভাঁটি হচ্ছে। এই এলাকার মাটি বেলে দোআঁশ। তাই টপসয়েলেই ফসল ভাল হয়। কিন্তু সেই টপসয়েলই কেটে নিয়ে ইটের ভাঁটি যাচ্ছে। তবে ঠিক কতোগুলো অবৈধ ইটভাঁটি আছে সঠিক হিসেব নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় শতাধিক ইটভাঁটি থাকলেও জেলা প্রশাসনের কাছে মাত্র ২৪টি ভাঁটির খোঁজ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৬টি ভাঁটির পরিবেশগত ছাড়পত্র থাকলেও তা নবায়ন হয়নি কয়েকবছর। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে সন্দেহ করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। তারা জেলা প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলার পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন এ্যাডভোকেট জিল্লুর হোসেন। তিনি বলেন ইটভাঁটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোন প্রকার নিয়ম মানছে না মালিকরা। যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাঁটি। এসব অবৈধ ভাঁটির বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, জেলায় ২৪টির মতো ইটভাঁটি রয়েছে। অনেকেই অনুমোদনের আবেদন করেছেন। কয়েকটির ছাড়পত্র আছে। অবৈধ ইটভাঁটি বন্ধে, শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান। চরফ্যাশনে নির্বিচারে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ নিজস্ব সংবাদদাতা, চরফ্যাশন থেকে জানান, ভোলার চরফ্যাশনে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত ইটভাঁটি। এসব ভাঁটিতে নির্বিচারে বনের কাঠ পোড়ানা হচ্ছে। ফলে মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। প্রশাসন মাঝে মধ্যে দায়সারা অভিযান পরিচালনা করলেও রুখতে পারেনি ভাঁটি মালিকদের। ভোলা পরিবেশ অধিদফতর জানায়, উপজেলায় ৩৪টি ইটভাঁটির মধ্যে ১১টির ছাড়পত্র রয়েছে। আর বাকি ২৩টি ছাড়পত্র নেই। ইটভাঁটি মালিকেরা নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গড়ে তোলেন এসব ইটভাঁটি। জানা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৮টি ইটভাঁটির অনুমমোদন রয়েছে। বাকি ভাঁটিগুলো কোনটিই নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে না। অধিকাংশ ভাঁটিতে ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি নেই। ভাঁটিগুলোর বেশিরভাগই ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে স্থাপিত হয়েছে আবাদি জমি ও ঘনবসতি এলাকায়। লোকালয়ে অবস্থিত হওয়ায় এবং ব্যারেল চিমনি ব্যবহার করায় ওই সব এলাকার পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অনেকে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। ইটভাঁটি মালিকদের সূত্রে জানা যায়, নবেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভাঁটিতে ইট পোড়ানোর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত ১ চিমনির একটি ভাঁটিতে এক মৌসুমে ২৭ থেকে ২৮ লাখ ইট তৈরি হয়। আর দুই চিমনির ভাঁটিতে এক মৌসুমে ৫০ লাখ পর্যন্ত ইট তৈরি করা সম্ভব। এক লাখ ইট তৈরিতে কাঠ লাগে ২ হাজার মণ। সেই হিসেব অনুযায়ী উপজেলার ইটভাঁটিগুলোতে কোটি কোটি মণ কাঠ পোড়ানো হয়। তবে প্রকৃত হিসেব এর চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা যায়।
×