ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে ময়লার স্তূপ দুর্ভোগে পথচারীরা

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 সড়কে ময়লার স্তূপ দুর্ভোগে পথচারীরা

মামুন শেখ ॥ পুরান ঢাকার সদরঘাট নৌ-বন্দরের শ্যামবাজার ও আহসান মঞ্জিলের সামনে থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই করুণ। পুরো সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। এ তো সড়ক নয়, যেন ডাস্টবিন। দুর্গন্ধে চলাফেরা করতে পথচারীদের নাক ধরে প্রতিদিন যেতে হয়। শ্যামবাজারের দিকে সদরঘাট থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও কাঠের দোকানের কারণে রাস্তা বন্ধ। শ্যামবাজারের মূল সড়ক বন্ধ করে কাঁচাবাজারের দোকান। যার বর্জ্য সড়কে কিংবা নদীতে ফেলা হচ্ছে। সড়ক বন্ধ করে দোকান বসানোয় সবসময় এখানে যানজট লেগে থাকে। আর আহসান মঞ্জিল থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা আরও খারাপ। এ সড়ক যেন স্থায়ী ডাস্টবিন। ওয়াইজঘাট এলাকার ফল মার্কেটের সামনে ট্রাক থেকে দিনের বেলায় পণ্য ওঠা-নামা করা হয়। আবার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান দিনের বেলায় সড়ক বন্ধ করে পার্কিং করে রাখা হয়। ওয়াইজঘাট এলাকার ফলের মার্কেটের বর্জ্য একদিকে সড়ক ও নদীতে ফেলা হয়, আরেকদিকে সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে আছেন খুচরা ফল বিক্রেতারা। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের পণ্যের বর্জ্যে সয়লাব পুরো সড়ক। পাশে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনের কনটেইনার থাকলেও সেটির চেয়ে সড়কের অবস্থা খারাপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজারো মানুষ চলাচল করে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা ছাড়াও সড়কটি দিয়ে শিক্ষার্থী, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এতে প্রতিদিনই তাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বুধবার দুপুরে দেখা গেছে, নগরের সদরঘাট নৌ-বন্দরের শ্যামবাজার ও আহসান মঞ্জিলের সামনে থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনা রয়েছে। সড়ক ঘেঁষে অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বর্জ্যরে স্তূপ রয়েছে। ফলের আড়তের নষ্ট হয়ে যাওয়া ফল, কাঁচাবাজারের নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজি, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, কার্টুন, কর্কশিট, কাগজ, পলিথিন, বস্তা, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, উচ্ছিষ্ট খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে স্তূপাকারে রয়েছে। এসব আবর্জনা রাস্তার চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সৌন্দর্যও বিনষ্ট হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দার তানভীর আহমেদ বলেন, এই সড়কটির অবস্থা সবসময় একই। এটি সড়ক না ডাস্টবিন দেখে বোঝা যায় না। তোহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাসা এই এলাকাতেই। প্রতিদিনই দুর্গন্ধ সহ্য করে পথ চলতে হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থা চললেও এসব আবর্জনা অপসারণে সিটি কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। প্রতিদিন ময়লার স্তূপ পেরিয়ে আশপাশের অন্তত কয়েক হাজার বাসিন্দাকে এ সড়ক মাড়াতে হয়। দুর্গন্ধের কারণে নাকে-মুখে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলে এসব বর্জ্য মূল সড়কেও অনেক সময় গড়িয়ে চলে আসে। পুরো সড়কটিই যেন এখন আবর্জনার ভাগাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে ময়লা ফেলায় এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা থেকে এলাকায় জীবাণু ছড়াচ্ছে। মশা-মাছি পোকামাকড় জন্ম নিচ্ছে। আর শতবর্ষের ঐতিহ্য আহসান মঞ্জিল ঘিরে দেয়া হয়েছে টিন দিয়ে। আহসান মঞ্জিলের কর্মকর্তারা জানান, আগে বুড়িগঙ্গা নদীর কোমল বাতাস আহসান মঞ্জিলে পাওয়া যেত। এখনও পুরনো এ ঐতিহ্য দেখতে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার দেশী ও দেড় থেকে দুই শ’ বিদেশী দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু মঞ্জিল ঘিরে থাকা সড়কে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা দোকান বসিয়ে সেখানে ময়লা ফেলছেন, আবার কখনও মঞ্জিলের ভেতরে ময়লা ফেলছেন। এখন বুড়িগঙ্গা নদীর দুর্গন্ধ আর সড়কের ময়লার এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে বাঁচার জন্যই মঞ্জিলের চারদিকে টিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে আসা শাকিব হোসেন বলেন, নবাবী এই বাড়িটি দেখতে এসেছি। ভেতরের ভবন ও ঐতিহ্য দেখে ভাল লাগলেও বাইরের চিত্র মন খারাপ করে দিয়েছে। আহসান মঞ্জিল থেকে আগে সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদী দেখা যেত। কিন্তু এখন টিনের বেড়ার কারণে বুড়িগঙ্গা থেকে মঞ্জিল বিচ্ছিন্ন। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের ডেপুটি কিপার মোঃ ইলিয়াস খান বলেন, ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনটির সৌন্দর্য বর্ধনে অনেক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ভবনটি সংস্কার ও ফাঁকা জায়গায় ফুলের বাগান করা হবে। এতে যেন দর্শনার্থী বাড়ে। কিন্তু বাইরের পরিবেশের কারণে মঞ্জিলের চতুর্দিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় থানায় কয়েকবার বলা হলেও সামনের ফুটপাথ ও ময়লার বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি। আহসান মঞ্জিলের বাইরের পরিবেশ পরিবর্তন করলে দর্শনার্থী আরও বাড়বে।
×