ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুকূপে বসবাস ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের

ময়মনসিংহে বেশিরভাগ বহুতল ভবনে অগ্নি নির্বাপণের কোন ব্যবস্থা নেই!

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 ময়মনসিংহে বেশিরভাগ বহুতল  ভবনে অগ্নি নির্বাপণের কোন  ব্যবস্থা নেই!

স্টাফ রিপোর্টার,ময়মনসিংহ ॥ নগরীর বেশিরভাগ বহুতল ভবনেই অগ্নি নির্বাপণের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব ভবনের বাসিন্দা আছেন মারাত্মক অগ্নি ঝুঁকিতে। অথচ এ নিয়ে নির্বিকার ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণের আগে ফায়ার সার্ভিস কর্র্তৃপক্ষ এসব ভবন মালিককে অনাপত্তির(এনওসি) ছাড়পত্র দেয়। ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিসের শর্ত মানা হচ্ছে কিনা সেটি দেখভাল করা হয়নি। এমন সুযোগে বিভাগ ঘোষণার পর বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয় ময়মনসিংহে। অনুমোদনের পর নক্সা পরিবর্তন করাসহ বাড়তি উর্ধমুখী ভবন নির্মাণেরও অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, শর্ত ভঙ্গকারী ভবন মালিকদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। শর্ত লঙ্ঘনের প্রমাণ পেলেই ভবন মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরীর ৬১ নম্বর সারদা ঘোষ রোডের বেসরকারী হাউজিং কোম্পানির নির্মাণ করা ১০ তলা মেহেদী টাওয়ারে অগ্নি নির্বাপণের কোন ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। এই টাওয়ারে ২৭ পরিবারের বসবাস। বহুতল ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ও লিফট সুবিধা রাখা হয়েছে। জরুরী নির্গমনে আলাদা কোন সিঁড়ি কিংবা লিফটের কিছুই নেই। ভবনের কোন ফ্ল্যাটেই দেখা যায়নি ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা। আগুন নেভাতে ভবনটিতে নেই কোন আন্ডারগ্রাউন্ড কিংবা ছাদে ওয়াটার রিজারভয়ার। কেবল মেদেনী টাওয়ারই নয়, নগরীর বেশিরভাগ বহুতল ভবনের অবস্থাই এমন। ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, বহুতল ভবন নির্মাণের অনাপত্তির ছাড়পত্রে নিজস্ব পানির উৎস(হোজ-রিল), স্মোক ডিটেক্টর, সেফটি লবি, কম্পোজিটরি এয়ার প্রেসার সিঁড়ি, ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন, হোজ-রিল ও ফায়ার লিফটসহ ২০টি শর্ত দেয়া হয়। ভবনের ডিজাইন প্ল্যানে ফায়ার সার্ভিসের শর্তে থাকা সুবিধা দেখে ভবন নির্মাণের অনুমোদন করে সিটি কর্পোরেশন। ফায়ার সার্ভিসের ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন জানান, অনাপত্তির (এনওসি) ছাড়পত্র নিয়ে ভবন নির্মাণের পর ব্যবহারের আগে বাধ্যতামূলক অকুপেন্সি ছাড়পত্র নেয়ার বিধান রয়েছে। শর্তপূরণের প্রমাণ দেখে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ এই ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। কিন্তু বিস্ময় প্রকাশ করে এই কর্মকর্তা জানান, এনওসি নিয়ে কাজ সম্পন্ন করার পর অকুপেন্সি ছাড়পত্র নিয়েছেন কোন ভবন মালিক এমন নজির নেই ময়মনসিংহে। অভিযোগ রয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কর্মকর্তাদের স্পর্শকাতর এই বিষয়টি মনিটর করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। ফলে প্রভাবশালী ভবন মালিকরা ছাড়পত্রে যাই থাকুক না কেন খরচ বাঁচিয়ে ভবন নির্মাণ করছেন নিজের খেয়ালখুশি মতো। এমতাবস্থায় বেসরকারী হাউজিং কোম্পানির নির্মাণ করা এসব বহুতল ভবন পরিণত হচ্ছে মৃত্যুকূপে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, এসব ভবনে কোন অগ্নিকা- ঘটলে আলাদা সিঁড়ি ও লিফটসহ ফায়ার ফাইটিং না থাকায় তাদের কর্মীদের চেয়ে দেখা ছাড়া করণীয় কিছুই থাকবে না। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের বিদ্যমান সুবিধায় দোতলার উপরের আগুন নেভানোর সক্ষমতাও নেই সংস্থাটির। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিঞা জানান, শর্তের বাস্তবায়ন দেখার দায়িত্ব অনাপত্তির ছাড়পত্র দেয়া সংস্থাটির। তারপরও শর্ত ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ী ভবন মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই প্রকৌশলী। তবে সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীর এই ধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্যকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা বলে মনে করছেন নাগরিক নেতৃবৃন্দ। ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের নেতা কাজী আজাদ জাহান শামীম জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশন এর দায় এড়াতে পারে না। স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, নগরীর বাউন্ডারি রোড, জিলা স্কুল রোড, পন্ডিতপাড়া, কলেজ রোড, নতুন বাজার, দুর্গাবাড়ি রোড, চরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা শতাধিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন ছাড়াও সরকারীভাবে গড়ে ওঠা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম কোর্ট) ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বেসরকারী বহুতল প্রাইভেট হাসপাতালেও নেই অগ্নি নির্বাপণের কোন ব্যবস্থা।
×