ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বোরোতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বরাদ্দ শত কোটি টাকা, চাহিদা আরও বেশি

প্রকাশিত: ১০:১২, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  বোরোতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বরাদ্দ শত কোটি টাকা, চাহিদা আরও বেশি

ওয়াজেদ হীরা ॥ চলছে বোরো মৌসুম। শ্রমিক সঙ্কটসহ নানা কারণে এই মৌসুমে কৃষকদের খরচ বেশি হয়। আর খরচ কমাতে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে যান্ত্রিকীকরণে। মাঠ পর্যায়ে চাহিদা বেশি থাকলেও চলতি বোরো মৌসুমে যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ৪০০ কোটি চাইলেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে মাঠ পর্যায়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় এই অর্থ অপ্রতুল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। গত নয় মাস ধরে বন্ধ থাকা ভর্তুকি কার্যক্রমে এ পরিমাণ অর্থ নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, কৃষকদের সুবিধার্থে টাকা শেষ হলেও আরও বরাদ্দ পাওয়া যাবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে চাহিদা বাড়ছে কৃষকদের। খরচ কম স্বল্প সময়ে অধিক কাজ আর সরকারের ভর্তুকি সব মিলিয়ে দিন দিন গুরুত্ব ও চাহিদা দুই বাড়ছে যান্ত্রিকীকরণে। আমনের চেয়ে বোরো মৌসুমে শ্রমিক সঙ্কটসহ উৎপাদন খরচ বেশি হয়। যা যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপণ-কর্তনে কৃষকদের খরচ কমে যায় অনেক। অর্থ ছাড়ের বিষয়টি নিয়ে কৃষি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে গত কয়েক মাসে একাধিক চিঠি চালাচালিও হয়। অর্থ বরাদ্দের অভাবে আমনে যন্ত্র সরবরাহ করা যায়নি। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, বোরোটাই মূল লক্ষ্য, আমন নয়। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪০০ কোটি টাকা চেয়ে একটি চিঠি অর্থ সচিব বরাবর পাঠান কৃষি সচিব। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নীতিমালা না থাকায় পরে খসড়া নীতিমালা সংযুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠান কৃষি সচিব। সেটি মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করলে পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ দেয়। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি ব্যবস্থাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চায় সরকার। ভবিষ্যতের জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমরা একটি বড় প্রকল্প নিচ্ছি। আপাতত থোক বরাদ্দ হিসেবে এই অর্থ দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ কোটি টাকার অনুমতি পেয়েছি। মাঠ পর্যায়ে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে এই অর্থে সেগুলো মেটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। কেননা বরাদ্দকৃত অর্থ আমরা খরচ করতে পারলে আরও বেশি বরাদ্দ পাব। ফলে ভর্তুকি সহায়তা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আমাদের লাগলে টাকা দেয়া হবে। কৃষকদের মাঝে চাহিদা থাকলে আমরা তা পূরণে কাজ করব। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষির বহুমুখীকরণের মাধ্যমেই কৃষির উন্নয়ন সম্ভব। এ বিষয়ে দ্য মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্নভাবে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ব্যবস্থাটি সচল রাখার। বিভিন্ন মেয়াদে প্রকল্পের মাধ্যমে যে সহায়তা দেয়া হতো সেটি গত জুনে শেষ হয়েছে। কার্যত তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি কার্যক্রম। এরপর গত কয়েক মাস ধরেই সরকারের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা কৃষির যান্ত্রিকীকরণে বিশাল সহায়তা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছে। এতে কৃষক আবারও আগ্রহী হচ্ছেন যন্ত্র কেনায়। তারা অপেক্ষা করছেন কবে থেকে এ সহায়তা দেয়া হবে। ভর্তুকি সহায়তার আশায় কৃষি যন্ত্র কেনা শুরু করছেন না। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কৃষি যন্ত্রের। কিন্তু আমরা বিক্রি বাড়াতে পারছি না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের একাধিক সূত্রে জানা গেছে বরাবরই কৃষি যন্ত্রপাতিতে কৃষকদের চাহিদা বাড়ছে। সরকারের ভর্তুকি দেয়ার জন্য এখন কৃষকদের মধ্যে বিষয়টি বেশ ইতিবাচক। সেখানে এই অল্প বরাদ্দের চেয়ে অনেক বেশি চাহিদা থাকবে বলে একাধিক কর্মকর্তারা মনে করছেন। যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চাহিদা তার দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মাঠ পর্যায়ে চাহিদা বেশি হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমন্বয় করা যাবে। সূত্র আরও জানায়, আপাতত ধান রোপণ ও কর্তনের জন্য কম্বাইন্ড হারবেস্টার, রিপার এবং রাইস ট্রান্সপ্লান্টার এই তিন যন্ত্র কৃষকদের মধ্যে দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, আমি মনে করি যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এটা কমতো নয়ই বরং বেশি। এ জন্য বেশি এই এক শ’ কোটি আমাদের খরচ করতে হবে চলতি অর্থ বছরে জুনের মধ্যেই। এরপরেও যদিও চাহিদার তুলনায় টাকা লাগে সেটিও দেবে মন্ত্রণালয়। আমরা মাঠের হিসেব অনুসারেই কাজ করছি। আর সামনের দিনগুলোই এর জন্য বড় প্রকল্প তো আসছে সে কথাও বলেন সচিব।
×