ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্ব টালমাটাল!

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২৬ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্ব টালমাটাল!

সম্ভবত কোন একজন বিজ্ঞানী, হকিংস কিনা মনে নেই, ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর প্রকৃতি, প্রাণ যেমন বিপন্ন হচ্ছে, তেমনি মানুষের প্রাণ সংহারী নতুন নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটবে, যার ফলে মারা যাবে লাখ লাখ মানুষ! এটা তো ঠিক ইবোলা, জিকা, মার্স, সার্স- জাতীয় ফ্লু এই করোনা ভাইরাসের আগে এসেছে এবং এক একটি অঞ্চলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থেকে সে সব অঞ্চলে বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটিয়েছে। এবারই এই প্রথম শক্তিশালী একটি ভাইরাস চীনের উহানে, বলা হচ্ছে পশু বাজার থেকে সম্ভবত খাদ্যের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে। যে ভাইরাসটি এতটাই বেশি সংক্রামক যে, এটি এখন একদিকে ইউরোপ, অন্যদিকে আমেরিকা, আবার এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দ: পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে বিদেশ প্রত্যাগত মানুষের অন্য স্থানীয়দের-স্বজনদের সঙ্গে সহজেই মেলামেশা করার ফলে ছড়িয়ে পড়েছে! এমনকি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে! সবচাইতে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে- আমরা প্রথমত জেনেছিলাম ভাইরাসটি মাত্র দু’তিন জন বিদেশ প্রত্যাগত মানুষের দেহে পাওয়া গেছে। কোয়ারেন্টাইনে না থাকার জন্য প্রায় চারশ’ প্রবাসী যখন স্লোগান, বিক্ষোভ করেছে, তখনও আমরা ভাবিনি এরা নিজ উদ্যোগে অন্তত তাদের স্বজনদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে না এবং রোগটির বিস্তার রোধ করবে না। তারা বিদেশের কঠোর লকডাউন দেখেছে। তারপরও তারা নিশঙ্কচিত্তে মেলামেশা করেছে, ঘুরে বেরিয়েছে, যা চৌদ্দ দিন পরে করলে ভাইরাসটি এতটা ছড়িয়ে পড়ত না। ভাইরাসটি, জানছি যে বাতাসে তিন ঘণ্টা বাঁচে, কিন্তু কাঠের টেবিল চেয়ার, স্টিলের বস্তুতে ২/৩ দিন বেঁচে থাকে! ফলে বার বার হাত ধুতে হবে, ভাইরাস যে কোন বস্তু থেকে মানবদেহে প্রবেশের সময় যাতে না পায়। কারণ আমরা কাঠ, স্টিল ইত্যাদির দরজা, টেবিল, চেয়ার ইত্যাদিতে সব সময় হাত দেই। আমাদের দেশের বাতাসে আর্দ্রতা বেশি বলে শুনেছিলাম ঐ ভারি ভাইরাসটি ভাসতে পারবে না, নিচে পড়ে যায়। তাহলে মানবদেহে ঢোকার সুযোগ কমে যায়। তথ্যটি কতটা সত্য, জানি না। কিন্তু ভয়ংকর তথ্য পাচ্ছি ড. জাফর ইকবালের লেখা থেকে। সব দেশেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ একজন দু’জনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। সেজন্য বাংলাদেশেও একজন সত্তরোর্ধ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর করোনায় মৃত্যুতে কেউ খুব একটা শঙ্কিত হয়নি। যারা কোয়ারেন্টাইন মানেনি, তাদের মধ্যে তিন-চারজনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এতে কেউ খুব একটা গা করেনি। কিন্তু গত দু’তিন দিনে যেন আক্রান্তের সংখ্যা থেকে ৪, ১০ থেকে ১৪, লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ড. জাফর ইকবালের তথ্য মতে, এটি জ্যামিতিকহারে ভাইরাসটি সংক্রামণের ইঙ্গিত কি? যেটি খুবই উদ্বেগজনক তথ্য! কারণ দুই দু’গুনে চার, চার চারে ষোলো, ষোলো ষোলো? ও মাই গড! ডাক্তার, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব দফতর, রসায়নবিদ, সংখ্যাতত্ত্ববিদ মিলে দ্রুত একটি উচ্চ শক্তিসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে, যারা এই ভাইরাসের আচরণ, সংক্রমণের প্রবণতা, কার্যকরি চিকিৎসা সেবা, ওষুধ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করবে এবং সরকার ও জাতিকে দিক নির্দেশনা দেবে। এটা ভাল সিদ্ধান্ত হয়েছে- নিয়ম না মানার প্রবণতাশীল বাঙালীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। ‘আইসোলেশনে’ থাকাটা হাসপাতাল ও ডাক্তার-নার্সদের ওপর থাকছে। সেখানেও অবশ্য একদিকে যেমন ডাক্তার-নার্সদের ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার পোশাকসহ অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা থাকতে হবে, তেমনি হাসপাতালের বাইরে র‌্যাব-পুলিশের পাহারাও থাকতে হবে। অর্থাৎ, এখনকার কাজ হলো- আক্রান্ত রোগী যেন অন্যের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে। স্মরণ রাখতে হবে- গতবারের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আমাদের বেশ কিছু চিকিৎসক সেবা দিতে গিয়ে মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যা জাতির জন্য বিশাল ক্ষতি। অথচ ডেঙ্গু রোগী থেকে রোগীতে ছড়ায় না, তাকে স্পর্শ করলে, কাছে গেলে কোন ভয় নেই। কিন্তু আমরা হাসপাতালকে মশাশূন্য করতে পারিনি। এবারের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাবার সুযোগ নেই। সেই জন্য চিকিৎসক-নার্সদের এবার আপাদমস্তক প্রটেক্টিভ পোশাকে থাকতে হবে, হাতে গ্লাভস তো অবশ্যই থাকা দরকার। এখন যেসব ডাক্তার জ্বরের রোগী ফেলে চলে যাচ্ছেন, নিশ্চয় তাদের প্রটেক্টিভ পোশাক নেই। সরকারকে এটি নিশ্চিত করতে হবে। নার্স-চিকিৎসকের নিরাপত্তা না থাকলে নার্স-চিকিৎসক কিভাবে চিকিৎসা দেবেন? বার বার স্মরণ রাখতে হবে- বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে সংক্রামক রোগ শুরুতে রোধ করাই জাতি ও দেশকে রক্ষার একমাত্র উপায়। আমরা নিজেরা নিজেদের সুরক্ষা দেবার চেষ্টা করি না কেন? প্রথমত, বিদেশ ফেরত, করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে আগত স্বজনদের চৌদ্দ দিনের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা, নিজেরা দূরত্ব বজায় রাখা। দ্বিতীয়ত, যে কোন কাজ করেই হাত ধুয়ে ফেলা, বার বার হাত ধোয়া। কেননা সব কাজ হাত দিয়েই করা হয় বলে হাত দূষিত, জীবাণু আক্রান্ত হয় দ্রুত এবং বার বার। তৃতীয়ত, ধুলায় ভর্তি ঢাকা, চট্টগ্রামের রাজপথে পানি উঁচু থেকে স্প্রে করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, মশার ওষুধও দেয়া হচ্ছে না। পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও ভীত, ওদের দোষ দেয়া যায় না। নিজের ময়লা নিজেদের ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থত, ধুলা থেকে অনেকেরই সর্দি-কাশি হচ্ছে। আমাদের মা-নানিদের দেখানো ব্যবস্থাগুলো এখন আমরা ব্যবহার করতে পারি। ক. এক চামচ সর্ষের তেলে দু’তিনটি রসুন কোয়া ভেজে হালকা লবণসহ মৃদু গরম অবস্থায় খাওয়া। খ. তুলসী পাতা জ্বাল দিয়ে সে পানির আধ কাপে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া। ঐ ডেকচিতে তুলসী জ্বাল হতে হতে কালচে রঙের হয়ে যাবে। গ. সকালে এক কাপ গরম পানিতে এক টুকরো লেবুর রস ও এক চামচ মধু, একটু গোলমরিচের গুড়ো মিশিয়ে খাওয়া। ঘ. বাসক পাতা পাওয়া গেলে তার রসও খাওয়া কাশি কমাতে সহায়ক। ঙ. সাত-আটটা গোলমরিচ চিবিয়ে সকালে খালি পেটে গরম পানি দিয়ে খেয়ে ফেলা। চ. হালকা নুনের পানি দিয়ে গার্গল করা, কিছুটা ঢোক গিলে খেয়ে ফেলা। ছ. যতদিন কাশি থাকবে, সারাদিন কুসুম গরম পানি খাওয়া। এত সহজে কাশি সারার উপায় আর কিন্তু নেই। করোনার শেষ কামড় তো নিউমোনিয়া, যা কাশি দিয়ে শুরু হয়। কাশি থেকে আত্মরক্ষা করা গেলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। তবে, কালকেই আমি বাজারে দেখলাম- এক তরুণ হাঁচি দিল, টিসু-রুমাল দেখলাম না, ওর চেনা পাশের প্রৌঢ় ওর হাত ধরে ওকে বলল, ‘কিছু হবে না’! এবার পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারণ, আমি তো ডাক্তার বা বিজ্ঞানী নই, যদিও বিজ্ঞানের তথ্য প্রিয় বিষয়। মার কাছ থেকে এসব পারিবারিক চিকিৎসায় বাল্যকালে, বড়বেলায় সুস্থ হয়েছি। এর কয়েকটি পাঠকদের জানালাম। উল্লেখ্য, বিশ্বায়ন শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যকে গ্রাস করেনি। প্রবাসে গিয়ে চাকরি করে অর্থ আয়ও এর সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং অসুস্থতার সময় মানুষ স্বদেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে। জানি, ওদের আসতে দিতে হবে। তবে, ‘আইসোলেশন’, ‘কোয়ারেন্টাইন’ কেন দরকার, তা তাদেরকে জানানো, এটা মানতে বাধ্য করা, জরিমানা করা ইত্যাদি ব্যবস্থাও পরিচালনা করতে হবে। বাঙালীর থুথু ফেলার অভ্যাসটা যদি এই চোটে বন্ধ হয়, তবু ভাল। আমাদের শাড়ি তুলে হাঁটতে ভাল লাগে না। নিষেধ করি, কিন্তু শোনে না। জানি না, বাংলাদেশ কিভাবে এ সঙ্কট থেকে উদ্ধার পাবে। এদিকে ডেঙ্গু মৌসুম আসছে। আচ্ছা, জানতে ইচ্ছে করে- যদি খুব একটা বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি হয়, তাহলে এই করোনাদের কি মৃত্যু হবে? মনে মনে আমি ঝড়-বৃষ্টির প্রার্থনা করছি- প্রতিদিন। এর মধ্যে একটি ভাল তথ্য হলো- গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের চিকিৎসক-গবেষক দল মাত্র পনেরো মিনিটে করোনা শনাক্ত করবার কিট তৈরি করেছে! এটি দেশের জন্য গর্বের। এটি দ্রুততার সঙ্গে সহায়তা লাভ করে দেশে রোগ শনাক্তের কাজটিকে সহজ করুক- এটিই কাম্য। যুক্তরাষ্ট্রে টিকা উদ্ভাবিত হয়েছে- এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগে কত প্রাণ যে করোনা নেবে, জানি না। তবে, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভাইরাস, জীবাণুদের বিস্তারে যোগসূত্র আছে বলেই মনে হচ্ছে। একটা বিষয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে- বিমান চলাচল বন্ধ হলো। বিমান পরিবহন খাতে বিশাল ধস নামল। দেশ-বিদেশে শুধু পর্যটক নয়, ব্যবসা-শিল্প-বাণিজ্য-শ্রমসহ নানা পেশাজীবীর চলাচল, সেই সঙ্গে দেশে দেশে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ হলোÑ শ্রমিক, চাকরিজীবী খুচরা পণ্য বিক্রেতা- তাদের আয় বন্ধ হলো। চাকরিতে ছাঁটাই হলো লাখ লাখ মানুষ। এমনকি, ভাবছি, কলা বিক্রেতা, বড়ই বিক্রেতা, বাদাম বিক্রেতা, রিক্সাওয়ালারাই বা কিভাবে আয় করবে, কিভাবে সংসার চালাবে? কামার, কুমারেরা, তাঁতী, জেলেÑতাদের পণ্য কারা কিনবে? এই বিশাল বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া ‘দুষ্ট চক্র’ সব দেশের সব পেশাজীবীদের ওপর এক অর্থনৈতিক হামলা করতে চলেছে- সে তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। পুরো বিশ্বের সব দেশের সরকার ও বিত্তবানদের একটি জোট গঠিত হওয়া দরকার, যে জোট সব দেশের অস্তিত্ব রক্ষার উপায় উদ্ভাবন করবে, সব দেশের রোগ এবং অর্থনীতি দু’ক্ষেত্রকেই মনিটরিং করবে, যে দেশে যেমন পদক্ষেপ জরুরী, সে দেশের জন্য সে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তা করা না হলে, বিশ্বায়ন লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাবে। বিশ্বনেতাদের রাজনীতিক, চিকিৎসক-গবেষক-অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ী-সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব জাতি, সব দেশকে রক্ষার্থে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। এবং সেটি করতে হবে- এখনই, আজকে, এই মুহূর্তে। তথ্যসূত্রে জানতে পারছি- করোনা ভাইরাসের জন্ম মানুষের হাতে! চীন বলেছিল, এটা আমেরিকানদের সেনাদের ল্যাবে তৈরি, যা তারা উহানে খেলতে গিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে! তার আগে আগে অবশ্য ট্রাম্প এটাকে ‘উহান-ভাইরাস’ নামে উল্লেখ করেছিল! এখন জীবাণু-যুদ্ধ শুরু করার অভিপ্রায়ে কোন এক গোষ্ঠী যদি কোন ভাইরাসকে জন্ম দেয়, যেটি কোনভাবে মুক্ত হয়ে মানবদেহকে আক্রান্ত করেছে- এমন মনে করছে কেউ কেউ। জীবাণু তো আর জানে না তার জন্মদাতা কে, কে বা তার শত্রু। সুতরাং জানা যাচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় কয়েক হাজার আমেরিকানের মৃত্যুর কারণ ফ্লু বলা হলেও, এদের মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শোনা যাচ্ছে অনুমতি দেয়নি! প্রকৃত সত্যটি আমরা জানি না, কিন্তু অনেক বিজ্ঞানীই এটিকে সধহ-সধফব বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন! যা হোক, এখন উলুখাগড়াদের প্রাণ যাচ্ছে! পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানবজাতিও সম্ভবত বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং হয়তো নিজেদের তৈরি দানবের হাতেই! লেখক : শিক্ষাবিদ
×