ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মহামারী ও মানবিকতা

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ২৭ মার্চ ২০২০

মহামারী ও মানবিকতা

বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের মহামারী। কোভিড-১৯ নামের প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির সংক্রমণে সারাবিশ্ব উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর শঙ্কা প্রতিনিয়ত বাড়ার যে দুঃসহ চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে, সেখানে বেঁচে থাকাদেরও জীবন সঙ্কটাপন্ন হতে সময় লাগছে না। করোনার অশনি সঙ্কেতে বিশ্ব অর্থনীতি আজ চরম হুমকির মুখে। বাংলাদেশও অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। যাতায়াত ব্যবস্থায় স্থবিরতা আসার কারণে পরিবহন খাতের নাকাল অবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষভাবে যারা দিনমজুর, দিন এনে নিত্য ভরণপোষণ চালায় তাদের অবস্থা বিপন্ন। মরণব্যাধি এই ভাইরাসের কারণে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। সবচেয়ে দুঃসময় পার করছে হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিদিনের রোজগার কমে যাওয়া এসব বিত্তহীন শ্রেণী খাদ্য সঙ্কটের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের আবর্তে পড়ে গেছে। খাদ্য মজুদ করার সঙ্গতি এদের থাকে না। দেশে এখন মানবিক বিপর্যয়ের এক চরম দুঃসময়। বিশিষ্টজনেরা এমন দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্তত প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদার প্রয়োজনীয় সঙ্গতি যাতে দুস্থ ও অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, তেমন ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ এই আর্থিক মন্দাকে প্রাসঙ্গিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান মনে করছেন এখনই জরুরীভিত্তিতে তহবিল গঠন করতে হবে, প্রয়োজনে অনেক কিছু থেকে বরাদ্দ কমিয়ে এই ফান্ড তৈরি করা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। আগামী ২০২০-২১ সালের বাজেট থেকে কিছু কর্তন করে নতুন তহবিল গঠনের উদ্যোগ সবার আগে করা উচিত। এছাড়া দেশের আর্থিক খাত সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উন্নয়ন সহায়ক উদ্যোগ গ্রহণ সত্যিই আশান্বিত হওয়ার ব্যাপার। তবে সবার আগে সাধারণ মানুষকে বাঁচানোই সব থেকে জরুরী। সেক্ষেত্রে বিশেষ তহবিল গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে পারে। আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য ও মানবিক খাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া সময়ের যৌক্তিক চাহিদা। তেমন নির্দেশনায় বাজেট সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত করতে হবে। আর বিশেষ তহবিলের টাকা যাতে অসহায় ও দুস্থ মানুষের হাতে পৌঁছায় তেমন ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেয়াও জরুরী। এর ব্যত্যয় হলে আক্রান্ত ও মুমূর্ষু রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ ইতোমধ্যে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে অনেক ডাক্তার ও নার্স কোয়ারেন্টাইনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, দেশের এই দুর্যোগ মোকাবেলায় ভারত সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলও বরাদ্দ করেছে। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশকে বিশেষ বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মানবতা বিপর্যয়ের এই কঠিন সময় সবাইকে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
×