ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চাই সামাজিক সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ২৭ মার্চ ২০২০

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চাই সামাজিক সচেতনতা

গত দু’দিন আগে আমাদের ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হলো। এ দেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্ব গুণে। এবারে অবশ্য কোভিড-১৯ এর কারণে সারা বিশ্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ¤্রয়িমাণ। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এভাবে আইসোলেশনে কোন দেশ ছিল না। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বারংবার দেশের মানুষকে সচেতন হতে বলছেন- ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত নিয়মাবলী যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিচ্ছেন। স্থানে স্থানে লকডাউন প্রয়োজন অনুসারে করার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে যদিও ইউরোপিয়ান দেশগুলোর তুলনায় নগণ্য। তবে বৈশ্বিক ও জাতীয় সঙ্কটে যেখানে বিএনপি-জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত ছিল, তারা জাতির পাশে না দাঁড়িয়ে বরং ছিদ্র অন্বেষণে ব্যস্ত রয়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে ইতালি, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনের তুলনা করতে যাওয়া বাতুলতা। আব্দুর নূর তুষার যে ভাষায় বক্তব্য রাখলেন তা মোটেও ঠিক হয়নি। অবশ্যই যারা স্বাস্থ্যসেবা দেবেন তাদের জন্য প্রটেকটিভ ইন্সট্রুমেন্টের প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি যে সমস্ত সাংবাদিক সংবাদ কভার করবেন তাদেরও প্রটেকটিভ ইন্সট্রুমেন্টেরও প্রয়োজন আছে। চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট মার্ক এ্যান্ড স্পেন্সার টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে। এ প্রকল্পে বুয়েট এলুমনি, পে ইট ফরওয়ার্ড, ওনেস্ট, রোটারী ক্লাব, ঢাকা, মানুষ মানুষের জন্য, এম এ্যান্ড এস যৌথভাবে কার্যক্রমটি শুরু করেছে। এতে দেশে চার লাখ পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট তৈরি হবে, যা আমাদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত নিয়মানুসারে প্রয়োজনে আরও পার্সোনাল ইক্যুইপমেন্ট তৈরি করা প্রয়োজন। চীন থেকেও টেস্ট করার অতি প্রয়োজনীয় কিট আনা হচ্ছে। প্রয়োজনে ডাক্তার ও নার্স চীন থেকে এনে তরুণ চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও সরকার গ্রহণ করবে। এদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রফেসর ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী, যার মধ্যে আছেন ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহ. রিয়াদ জামিরুদ্দীন, ড. ফিরোজ আহমদ এবং ড. মুহিবুল্লাহ খন্দকার করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট আবিষ্কার করেছেন। সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করোনা ভাইরাস কিট উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। ড্রাগ এ্যাডমিনেস্ট্রেশনের মহাপরিচালক যথার্থই বলেছেন যে, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিটটি তৃতীয় কোন ল্যাবে পরীক্ষা করা এবং যেহেতু সাধারণ মানুষের শরীরের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সেহেতু যে ল্যাবে এটি তৈরি হবে সেটি পরীক্ষা করে দেখবে। একদল ধান্দাবাজও দেশে তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত পারঙ্গম। তাদের প্রতিষেধক তৈরির কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা, উদ্বুদ্ধকরণ করা প্রয়োজন। কেননা আমাদের দেশে যদি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে যথাযথভাবে পরীক্ষা করা যায় তবে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। যারা রোগীদের সেবা প্রদান করতে গিয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের দ্রুত আরোগ্য প্রত্যাশা করছি। ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে তরুণ চিকিৎসক কোভিড-১৯ এর রোগী দেখেছিলেন, তিনি অসুস্থ হয়েছেন বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়। আল্লাহর কাছে তার দ্রুত আরোগ্য প্রত্যাশা করি। ইতোমধ্যে দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে যাতে শিক্ষার্থীরা বাসায় থাকেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা কেবল প্রশাসনের দায়িত্ব নয়, বরং পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্য-সদস্যারও। এইচএসসি ও সমতুল্য পরীক্ষাসমূহ স্থগিত করা হয়েছে। চারটি দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বিমানের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। গ্যাস এবং ইলেকট্রিসিটি বিলের ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকে কোন রকম সুদ ছাড়া মে মাস পর্যন্ত জমা দেয়া যাবে। স্থল বন্দর বেনাপোল, ভেড়ামারা, বাঙ্গলাবন্ধ, বুড়িমারী, রৌমারী, দর্শনা, নাকুগাঁও, তামাবিল এবং শিওলা দিয়ে বিদেশীদের প্রবেশ নিষেধ করেছে। দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গ্রামগঞ্জে, ইউনিয়নে হোম কোয়ারেন্টাইন কি জিনিস তা অনেকে জানে না। গ্রামীণ অঞ্চলে, যেখানে একটি ঘরে ৬-৭ জন বসবাস করে কিংবা শহরাঞ্চলে দু’রুমের বাসায় ৫-৬ জন থাকে, সেখানে হোম কোয়ারেন্টাইন কিভাবে থাকবে সেটা বোঝানো দরকারÑ আর এ কাজটি করবে উপযুক্ত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। হোম কোয়ারেন্টাইনে যাতে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ ও পানীয় ব্যবস্থা থাকে সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। লকডাউন করার পাশাপাশি সেখানকার মানুষগুলো যাতে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিদেশ প্রত্যাগতদের মাঝে যাতে ১৪ দিন বাড়িতে থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। তারা কোন নিয়ম-নীতি না মেনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন তাদের আইন অনুসারে চলতে নির্দেশ দিলে, কিংবা ফাইন করলেও তারা তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। এখন অবশ্য পাড়া-প্রতিবেশীরা সজাগ হয়েছে। বাঙালীরা আতিথেয়তাপ্রবণ জাতি। কিন্তু কোভিড-১৯ এর মতো ঘাতক ব্যাধির কারণে আজকে আতিথেয়তা দেয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি সরকার যেভাবে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে সেটি মেনে চলা উচিত। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতেও জনসমাবেশ ধর্মীয় বিধির আওতায় মেনে চলা দরকার। মক্কা-মদিনায় জুমার নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে সৌদি আরবে ২১ দিনের জন্য কার্ফু ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সকল শপিং মল ও বিপণি বিতান বন্ধ রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। ইতোমধ্যে পোশাক খাতে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্রয় আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। এর দরুন এক হাজার ঊনআশিটি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে বারো লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পোশাক খাতে প্রণোদনা দেয়া দরকার, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা সরাসরি আর্থিক সহায়তা পান। এদিকে অস্থিতিশীল পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল কোয়ারেন্টাইনে গেছেন। ইতোপূর্বে কানাডার প্রধানমন্ত্রী সস্ত্রীক কোয়ারেন্টাইনে গেছেন। ইতালিতে করোনায় মৃত্যুর হার রোধ করা যাচ্ছে না। জার্মানিতে ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার দরুন ইতালির তুলনায় তাদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল। অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাব, জিম, সিনেমা এবং উপাসনালয় বন্ধ করা হয়েছে। ভারতে ‘জনতার কার্ফু’ দেয়া হয়েছিল। ভারতে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছাড়াও গুজরাটের অন্তত চারটি শহর, রাজস্থান, দিল্লী, লক্ষেèৗসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে জনসচেতনতা ও বন্ধ ঘোষণা করেছে। আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে সারা দেশে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। ভারত হোয়াইটসঅ্যাপ, চেটবোট তৈরি করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। আমাদের দেশেও কিন্তু মোবাইলে ফোন করলে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতার কথা বলা হচ্ছে। যেহেতু একাধিক মানুষের জনসমাবেশ ঠিক নয়, সেহেতু দেশের সকল রেডিও, টিভিতে একাংকিকার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য অধিক হারে প্রচার করা দরকার। নচেত গ্রামীণ অঞ্চলে, এমনকি শহরের বস্তি অঞ্চলে আবার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে না। দেশের পোশাক শিল্প খাতকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম-নীতি মেনে প্রটেকটিভ ড্রেস তৈরির কাজে লাগানো যেতে পারে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক তৈরি করে অধিক হারে দুস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা যেতে পারে। এত বড় দুর্যোগ যেহেতু বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া আর কখনও হয়নি, আমাদের দেশে স্পেশাল আর্থিক টাস্কফোর্স এবং স্বাস্থ্য টাস্কফোর্স প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ইন্টিগ্রেটেড ওয়েতে কাজ করা দরকার। এটি গঠন করা অত্যন্ত ভাল কাজ হয়েছে। সামরিক ও বেসামরিক উভয় খাতকেই সরকার জাতীয় স্বার্থে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নিয়োজিত করেছে। তবু সুযোগ সন্ধানীরা বসে নেই। ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু তার পরও ক্রেতাদের মধ্যেও যাদের সামর্থ্য আছে তারা মজুদ করেই চলেছে। এটি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করেছেন। এদিকে, এ মরণব্যাধি নিয়ে একদল নিষ্ঠুর বিভ্রান্তিকর তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। এদের বিচার হওয়া উচিত। অনেকে বেকার হয়ে গেছেন। এদের কিভাবে আর্থিক সাহায্য দেয়া যায়, সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির প্রয়াস চলছে। আমাদের দেশের বেক্সিমকো, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির কাজ করতে পারে। এদিকে কায়সার পেরমেনিনটি ওয়াশিংটন হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সিওটোলে জেনিফার হেলারের দেহে পরীক্ষামূলকভাবে এমআরএনএ- ১২৭৩ নামে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। যদি এই ভ্যাকসিনটি সাফল্যও পায় তবে বাজারজাত করতে সময় লাগবে। আবেদন করব আমাদের বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রতিষেধক তৈরি করতে। এক্ষণে কোভিড-১৯ এর কারণে আমাদের সামাজিক আচার আচরণে, অতিথিপরায়ণতা এবং ব্যবহারজনিত পরিবর্তন আনা দরকার। স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাবলী মেনে চলা দরকার। দেশে দু’এর বেশি লোকের সমাগত একান্ত প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘটানো উচিত হবে না। কেবল স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না, বরং প্রত্যেকে তার অবস্থানে থেকে সচেতন হতে হবে। মরণঘাতী এ ব্যাধিটি যে কোন সময় সংস্পর্শে আসলে ছড়াতে পারে। এ অবস্থা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করা এবং জনমানবশূন্য রাখা প্রয়োজন। কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়াই উত্তম। ইতোমধ্যে পর্যটন মোটামুটিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাস্কের ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত মাস্ক উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগী নির্ণয়ের পরীক্ষার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। ভেন্টিলেটারের ব্যবস্থা যত বাড়ানো যায় ততই মঙ্গল। এ জন্য সরকার যে সার্ক তহবিলে অংশ নিচ্ছে সেটি যেমন উত্তম, তেমনি বিমসটেক ফান্ড বা অঞ্চলগত সাহায্য-সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে হবে। পাশাপাশি যারা বিত্তশালী আছেন তারা যাতে সরকারের তহবিলে অর্থায়ন করেন এবং সে প্রদেয় অর্থ যেন করমুক্ত হয়ে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ থেকে বিশেষ তহবিলের জন্য সাহায্য গ্রহণ করে তা সুষম বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছিল মূল চালিকাশক্তি। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে দেশের জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যাতে জনসমাগম না হয়, সে জন্য তাদের দলীয় ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী বাতিল করেছে। আসলে দেশ ও জাতির প্রতি তাদের যে একনিষ্ঠ ভালবাসা তার জন্যই তাদের কর্তব্যবোধ থেকে এটি করা। প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের জন্য আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে করোনাভাইরাস বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যা যখন আমাদের দেশেও ছোবল হানে, তখন অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও যদি কেউ সতর্ক না হয়, তবে সে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে না। আমরা বীরের জাতি। আমাদের উচিত আবেগপ্রবণ না হয়ে সতর্ক থাকা, সামাজিকভাবে সচেতন হওয়া। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের ইউএনও যে লকডাউনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন সেটি সঠিক ছিল। শিবচরেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল। গ্রামীণ এলাকার এনজিওকর্মীদের, ম্যাটস ডাক্তারদেরও প্রটেকটিভ ইক্যুপমেন্ট দিয়ে সহায়তা করতে হবে। এক্ষণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি নিম্নবিত্তসহ যারা বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়বেন তাদের জন্য খাদ্য সাহায্য দেয়া বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে বেসরকারী খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। রাজস্ব নীতি বর্তমান অবস্থায় তেমন কার্যকর হবে না। বরং মুদ্রা নীতিকে আরও গতিময়তা দিতে হবে। ভোক্তার আচরণগত পরিবারতন্ত্রের জন্য দরকার তাদের উপযুক্তভাবে মটিভেট করা। এদিকে লাইফ সেভিং ড্রাগের পর্যাপ্ত মজুদ যাতে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিদেশ ফেরতদের ওপর একতরফাভাবে দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে লাভ নেই। বরং সাধারণ জনমানুষ থেকে শুরু করে সবাই যাতে দ্রুত আরোগ্য লাভ করে, সে জন্য চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার সাহায্যও গ্রহণ করা যেতে পারে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো যেতে পারে। যে সমস্ত সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করবেন তাদের জন্য, হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ডবয়দের জন্য এবং গ্রামীণ এলাকায় ম্যাটস ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং প্রটেকটিভ মেজার্স দিতে হবে। প্রত্যেকটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজে যাতে পিসিআর মেশিন তৈরি করা যায়, সে জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। কোন কোন বিশিষ্ট নাগরিক এ সুযোগে সরকারকে মিথ্যা দোষারোপ করছেন, যেটি মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা একটি দরিদ্র দেশ যেটি ঘনবসতিপূর্ণ ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। রিজেন্ট এওয়ারওয়েজ যেভাবে তিন মাসের জন্য বিনা বেতন কর্মীদের ছুটি দিল সেটিও মোটেই ঠিক হয়নি। প্রত্যেক মানুষকে চলার জন্য ন্যূনতম ক্রয় ক্ষমতা থাকতে হবে। বৈশ্বিক এ দুর্যোগে যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষা চাই, তেমনি ক্রয় ক্ষমতাও প্রয়োজন। সর্বত্র লকডাউন না করে যেখানে করোনায় আক্রান্ত সেখানে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এক্ষণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ব্যবস্থা করা দরকার। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দিয়ে ’৯৮-এর বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঠেকিয়েছিল। এখন সে ধরনের জরুরী ব্যবস্থা দরকার। আমাদের বিশ্বাস, দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একযোগে কাজ করবে। লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট, প্রফেসর Pipulbd @gamil com)
×