ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভরসা ও মনোবল

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ২৮ মার্চ ২০২০

ভরসা ও মনোবল

স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ শোনার জন্য দেশবাসীর বিশেষ আগ্রহ ছিল। করোনাকালে সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি কী বার্তা দেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন, বিশেষ কোন নির্দেশনা আছে কিনা- এই সব কিছু জানার জন্য সরাসরি সম্প্রচারকৃত এই ভাষণ মানুষ শুনেছে। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য ঘরে থাকা অপরিহার্য এবং ভয়কে জয় করতে হবে- এ দুটি মূল বার্তাই মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে। যদিও দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সরকারের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার দিকগুলোও দেশবাসীর কাছে তিনি স্পষ্ট করেছেন। বলাবাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী প্রাসঙ্গিক বহু বিষয়ই তুলে ধরেছেন। সব মিলিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করার বিষয়টি এবং নতুন রোগকে ঠেকিয়ে দেয়ার জন্য সঠিক নিয়মে সংগ্রাম করার প্রেরণাই তার ভাষণ থেকে দেশবাসীর মূল প্রাপ্তি। দুর্যোগে ভরসা ও মনোবল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বের উন্নত সব দেশ যখন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে সে সময়ে আতঙ্কিত না হওয়া এবং ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান প্রধান বিবেচ্য। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশের মানুষকে এই প্রাণঘাতী সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা, এমন অঙ্গীকার সরকারপ্রধানের মুখ থেকে শুনতে পাওয়া আবশ্যক ছিল। ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যত দূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে- এমন বার্তাই এখন জরুরী, যা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যথার্থই বলেছেন, করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। আক্রান্ত সিংহভাগই কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে, আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণসংহারী হয়ে উঠেছে। সে জন্য পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সুরক্ষার বিষয়ে অনেক নেতিবাচক কথাই গণমাধ্যমে আসছে। তাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুত আছে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মহামারীর সময়ে খাদ্যসঙ্কটও দেখা দিতে পারে। এ সময়ে নানা কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়, নানা গুজব ছড়ানো হয়। সরকার এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। সরকারী গুদামগুলোতে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুত আছে, বেসরকারী মিল-মালিকদের কাছে এবং কৃষকদের ঘরেও প্রচুর খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। চলতি মৌসুমে আলু-পেঁয়াজ-মরিচ-গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তবে কিছু মানুষ এবং মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর মধ্যে খাদ্য মজুদের প্রবণতা থাকতে পারে। সেটি পরিত্যাজ্য। সরকারপ্রধান কৃচ্ছ্রতাসাধনের পরামর্শ দিয়েছেন। আরেকটি পরামর্শও খুবই উপযোগী, সেটি হলো ফসলের কোন জমি ফেলে না রাখা। বাংলাদেশের মাটি সুফলা উর্বরা। তাই ফসল ফলানোয় উদাসীনতা নয়। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান হিসেবে শ্রমিকদের প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। মালিক পক্ষও শ্রমিক কল্যাণে তাদের দায়িত্ব স্মরণে রাখুক। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সরকারও আন্তরিক হবে বলে দেশবাসী মনে করে। মানবিক প্রধানমন্ত্রীর প্রাসঙ্গিক বার্তা স্মরণ করি। তিনি বলেছেন, দুর্যোগের সময়ই মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়। এখনই সময় পরস্পরকে সহায়তা করার, মানবতা প্রদর্শনের। আমাদের প্রত্যাশা মানুষ মানবতা প্রদর্শনে কার্পণ্য করবে না। স্বাস্থ্যকর্মী ও সাংবাদিকরাই বর্তমান সময়ে প্রকৃত যোদ্ধা। তাদের সুরক্ষায় সামান্যতম সীমাবদ্ধতা কাম্য নয়। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দুঃসময়ে সংযত ও মানবিক আচরণ করবে, জনতার বন্ধু হিসেবে ভূমিকা রাখবেÑ এটাও স্মরণে রাখা চাই।
×