ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপন্ন তৈরি পোশাক শিল্প

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ২৮ মার্চ ২০২০

 বিপন্ন তৈরি পোশাক শিল্প

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আগ্রাসী সংক্রমণে স্থবির হয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি। আমদানি ও রফতানিতে এসেছে এক অনাকাক্সিক্ষত সঙ্কট ও বিপন্নতা। ভাইরাসটির সম্প্রসারণ এত ব্যাপক এবং দ্রুত যেখানে সারাবিশ্বই আজ এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায়। অভ্যন্তরীণ থেকে আরম্ভ করে বহির্বিশ্বেও সার্বিক যাতায়াত ব্যবস্থায় এসেছে এক শঙ্কিত গতিহীনতা। পশ্চিমা বিশ্বের অবরুদ্ধতায় বিশ্ব অর্থনীতিও অচল, থমকে যাওয়ার অবস্থায়। যেখান থেকে বাংলাদেশও এক অভিন্ন সম্প্রসারিত সংক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দশ দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে গণপরিবহনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশও এখন অবরুদ্ধতার বেষ্টনীতে। দেশজ উৎপাদন ও অর্থনীতির চাকা কিছুটা গতিহীনতার আবর্তে। কৃষি ও শিল্পে এসেছে এক দুর্যোগ। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের সুবিশাল খাতটি এখন মহাদুর্ভোগের কবলে। অন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে রফতানির একটি বিরাট অংশ আসে এই পোশাক শিল্প থেকে। পশ্চিমা বিশ্বই মূলত এই পোশাক খাতকে আমদানির মাধ্যমে শিল্প মালিকদের অর্থের যোগান দেয়। করোনাভাইরাসের এমন দুঃসময়ে আমদানিকারক অনেক পশ্চিমা দেশ তাদের পোশাক নির্মাণের চুক্তি বাতিল করেছে। কিছু দেশ এই আমদানির ব্যাপারে স্থগিতাদেশও আরোপ করে। এর আগে চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সেখান থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। তারপরেও আগের মজুদ করা কিছু কাঁচা উপকরণে অর্ডার করা পোশাক তৈরি করে যখন রফতানির উদ্দেশ্যে বিদেশে পাঠানো হবে তেমন সময়ে পশ্চিমা বিশ্ব তা বাতিল কিংবা স্থগিত করে দিয়ে দেশের এই সমৃদ্ধ রফতানি খাতকে চরম বিপন্নতায় ফেলে দেয়। আর এর মাসুল গুনতে হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার লোকসান দিয়ে। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর ধারাবাহিকভাবে অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সেখানে যেমন ক্রেতা সঙ্কট বিদ্যমান পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিও স্থবিরতার যাঁতাকলে। এছাড়া আছে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি। সঙ্গে তাদের বেতন-ভাতার অধিকারের ব্যাপারও। বার বার সতর্ক করা হচ্ছে জনসমাবেশকে যথাসম্ভব পরিত্যাগ করতে। ভাইরাস সংক্রমণের জন্য যা যথার্থই স্পর্শকাতর। তারপরেও এমন দুঃসময়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের দৈনিক শ্রমঘণ্টা এবং উদ্বৃত্ত সময় কাটিয়ে যে পোশাক শিল্পকে শেষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় সেখানে আসে আর এক চরম বিপর্যয়। পশ্চিমা বিশ্বে রফতানির জন্য তৈরি পোশাক শিল্পকে এখন প্রহর গুনতে হচ্ছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মাত্রাতিরিক্ত সঙ্কট। শিল্প মালিকরা ইতোমধ্যে আদেশ বাতিল করার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে ব্যস্ত। রফতানির মাধ্যমে আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে ১৯ লাখ শিল্প শ্রমিকের দুরবস্থা কিভাবে সামলানো হবে তা নিয়েও ব্যবসায়িক সংগঠনের মালিকরা উদ্বিগ্ন এবং বিশেষভাবে চিন্তিত। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণ এসেছে। তাছাড়া শ্রমিক আবাসন বা সংক্রমণকে ত্বরান্বিত ও সম্প্রসারিত করতে সময় নেবে না সেখানেও কঠোর নজরদারি গ্রহণ করা হয়েছে। শ্রম অধিদফতরের নির্দেশনায় সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে পোশাক শিল্প খাতটি এক দুঃসহ বিপর্যয়ের কবলে যা শুধু আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়াবেই না পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ, অস্বাস্থ্যকর ঝুঁকির মধ্যে হীনতার আবর্তে ঠেলে দেবে। এরপরও কারখানার মহাদুর্যোগ থেকে মুক্তির প্রহর গুনছে মানুষ। দুঃসময়ে কেটে গিয়ে সুসময় ফিরবে এমনটাই প্রত্যাশা।
×