ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাহিত্য

সাহিত্য বিভাগের সব খবর

লেখক কবিদের -মরিবার সাধ কেন জাগে

লেখক কবিদের -মরিবার সাধ কেন জাগে

লেখকরা মানুষকে জীবনের গূঢ় রূপ ও রঙের কথা জানান। জানান জীবনের যা কিছু সত্য-সুন্দর, জটিলতম রহস্য ও গভীরতম খাদে লুকানো সৃজনশীলন। লেখকরা অতীতকে ধারণ, ঐতিহ্যকে উপস্থাপন এবং ভবিষ্যকে দৃশ্যমান করেন। জোড়া দেন অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের। তাই সমাজ-রাষ্ট্রে লেখক মাত্রই বিশেষ গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ, যিনি লেখার মাধ্যমে মানুষের সামনে অজানা, অচেনা তুলে আনেন, তৃতীয় নয়নে তা বুঝার, ভাবার মনোজাগতিক পরিবেশ তৈরি করেন, মানুষও তাঁকে শ্রদ্ধা করে। এসব সত্ত্বেও বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনেক লেখক, কবি নিজেই আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু এসব লেখকদের কেন মরিবার সাধ জাগে, কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, গলায় ফাঁস কিংবা বিষের পেয়ালা হাতে নেন? কেন পৃথিবীকে অকালে বিদায় জানাতে চায়? এতে ব্যক্তিজীবন, লেখালেখির, এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব প্রভৃতি নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয়েছে।

জীবনের গল্প

জীবনের গল্প

‘ভদ্র মহিলা আমার চোখের দিকে তাকালেন, বেশ শক্ত করে উচ্চারণ করলেন, ইউ পিপল আর কাওয়ার্ড। দোজ হু কিল্ড দেয়ার ফাদার দে ডোন্ট লাভ দেয়ার কান্ট্রি এট অল। আই মাস্ট সে। আমি আর যেন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তিনি আবার আরেক রকম জুয়ার মেশিনে সুইচ টিপলেন। আর আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।’ (ভেগাসের রঙ্গশালায় বিদেশিনীর সঙ্গে পৃ. ১০৫) আলোচ্য গল্পের নায়িকা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এসে এক বাঙালি যুবকের প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েন। পঁচাত্তরের নির্মম নিষ্ঠুর ট্র্যাজেডি মেনে নিতে পারেনি এ গল্পের নায়িকা। বঙ্গবন্ধুকে পরিবার পরিজনসহ হত্যাকা-ের পর ব্যথিত মর্মাহত হয়ে তিনি নিজ দেশ, মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনেও তাদের ইশারা ছিল এবং পঁচাত্তর পরবর্তী বঙ্গবন্ধুকে আড়াল করার যে সর্বগ্রাসী ও বিনাশী তৎপরতা ছিল এসব অপচেষ্টাকে পরাভূত করে বঙ্গবন্ধু আজ হিরন্ময় চেতনায় উদ্ভাসিত। এ গল্পের লেখক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর সে দিকেই তাঁর চেতনাকে প্রসারিত করেছেন। লেখকের সমাজবীক্ষা বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গীকৃত।  নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের গল্পের বিষয় বহুমাত্রিক। তাঁর ভাষা ও গল্প বলার ধরন প্রথাগত নয়। সহজ সরল বাচনভঙ্গি তবে শিল্পরূপ আছে অনন্য ও ভিন্নমাত্রায়। নিজস্ব নির্মাণশৈলী তাঁর গল্পকে সমকালীন গল্পাকারদের চেয়ে আলাদা করেছে এ কথা বলা যায়।  নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তাঁর সাহিত্য চর্চার বিষয়ে জ্ঞাত ছিলাম না। তিনি এ বছর কথাসাহিত্য শাখায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। খবরটা আমি ভারতের মুম্বাইতে অবস্থানকালে অনলাইন নিউজ পড়ে জানতে পারি। মুম্বাই টাটা হাসপাতালে কর্কট রোগের চিকিৎসা শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশে আসি।  বইমেলায় নিজের বই প্রকাশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। মেলায় আড্ডা অনিয়মিত। একদিন কথা প্রকাশ থেকে সংগ্রহ করলাম ‘ভেগাসের রঙ্গশালায় বিদেশিনীর সঙ্গে’। বইয়ের বড় নাম দেখে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের কথা মনে হলো। না মার্কেজের সঙ্গে মিল নেই। ছোট ছোট বাক্য। সহজ সরল বয়ানভঙ্গি। কত কত হাহাকার। ছোট ছোট দুঃখ। কত কত ভালোবাসা, নির্মমতা নিষ্ঠুরতা জুয়াখেলা। জীবনটাতে জুয়াই।

গল্প ॥ কাক

গল্প ॥ কাক

টঙের ওপর বসে থেকেই সিরাজুদ্দি লক্ষ্য করল আশ্বিন-কার্তিক মাসের ম্যাড়ম্যাড়ে রোদের মতো লোকটা এগিয়ে আসছে এদিকে। মুখে কোনো কথা নেই, চোখে কেমন একটা পেলবতা। কি চায় লোকটা ওমন করে, কে জানে। সিরাজুদ্দি চিৎকার করে প্রশ্ন করতেই, লোকটা জানালো, ফজরালী মুন্সীর বাড়ি কোন্ দিকে... ফজরালী মুন্সীর নাম শুনেই খানিক টানটান হয়ে যায় সিরাজুদ্দি। কে হতে পারে মানুষটা। যে কি না তার বাপের খোঁজ করছে, গ্রাম তো এখন দিনকে দিন লাফিয়ে-লাফিয়ে কেমন বদলে যাচ্ছে। আর গ্রামের মানুষগুলোও সে আর আগের মতো নেই। সহজ সোজা কেতাদুরস্ত ধরনের নরম স্বভাবের মানুষেরাও দিন দিন পালটে গেছে, পালটে যেতে চায়। শহর আর গ্রামের ব্যবধান ঘুঁচে যাচ্ছে অনুমান করা যায়। গ্রাম বলে হয়তো কিছুই থাকবে না,সবই শহর হয়ে যাবে, চাকরিজীবী মানুষের মাথা গোঁজার আশ্রয় যাকে বলে আর কি!  আগন্তুক লোকটা অকস্মাৎ বলে ওঠে, আমি রহিমবক্স, ফজরালী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি... সিরাজুদ্দি টঙের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে যেভাবে বসে ছিলো সেভাবেই আছে, শুধু রহিমবক্সের দিকে তাকিয়ে মনে-মনে বললো, আজকাল তো মানুষজন বিনা কারণে আসে না, কোনো ধান্ধা ছাড়া কি কেউ সময় নষ্ট করে বাবা! তারপর বলে, আমি ফজরালীর ছেলে... আগন্তুক যেন হাতে স্বর্গ পেলো, সময় মতো বৃষ্টি হলে কৃষকের মুখ যেমন আনন্দে ভরে ওঠে, রহিমবক্সের চোখ মুহূর্তে যেন সেভাবেই জ¦লজ¦ল করে জ¦লে উঠলো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে কেমন বাঁধো-বাঁধো। দূরের মাঠের সবুজ ধান লকলক করছে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই ধান কাটা হবে, মাড়াই হবে। ধান মানে তো প্রাণ কৃষকের প্রাণ! আশপাশের জমিগুলো শহরের বড়-বড় প্রমোটর আর শিল্পপতিদের হাতে বন্দি হয়ে গেছে এরই মধ্যে। খুব ঘন-ঘন সীমানা প্রাচীর বা ভাগের পিলার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।

বৈশাখী উৎসব ও মেলা ॥ বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়

বৈশাখী উৎসব ও মেলা ॥ বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়

বাঙলার প্রাচীন সংস্কৃতি বর্ষবরণ উৎসব এবং বৈশাখী মেলা গ্রামীণজীবন ছাপিয়ে নাগরিক জীবনে ধর্ম-গোত্র-বর্ণ নির্বিশেষ সকল শ্রেণি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এ মেলা এখন জাতীয় বন্ধন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বর্ষার আগমনকে নববর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে রবীন্দ্রনাথ গেয়েছেন, “এসো হে বৈশাখ এসো এসো ... মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জ্বরা অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা। রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি; এই যে রসের আবেশ রাশি’র সঙ্গে প্রাচীন কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রায় হালচাষ বা ভূমিকর্ষ এবং ফসল উৎপাদন মৌসুমের নিবিড় যোগ রয়েছে।  বাঙালির ভাষা-আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামের মতন, প্রচলিত সংস্কৃতি রক্ষা এবং লালন পালনের জন্য রাজশক্তির বাধার মুখে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৬৭ খ্রিঃ রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ হলে ঘুুমন্ত বাঙালি জেগে ওঠে। ছায়ানট ও তখনকার আলোকিত কিছু মানুুষের আন্দোলন; পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালির গ্রামীণ বর্ষবরণ উৎসব গ্রাম থেকে আসন পাতে ঢাকা নগরের রমনা বটমূলে। সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের এই নিবিড় বর্ষবরণ পালন পরবর্তীতে বাঙলাদেশের সকল নগর, বন্দর, গ্রামগঞ্জ এমনকি বহির্বিশ্বে বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ১লা বৈশাখ বরণের ছায়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামীণ জীবনে বৈশাখী মেলা পালনের উৎস  সেই সুুপ্রাচীন যুগ থেকে বাঙালির পূর্বসূরিগণ জীবীকার সন্ধান, জীবনের প্রয়োজন এবং সামাজিক নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উৎসব-মেলা সৃষ্টি এবং পালন করে আসছে। কৃষিতান্ত্রিক জীবনযাত্রায় বর্ষবরণ অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রকৃতি থেকে খাদ্যশস্য উৎপাদনের সূচনাকাল হিসেবে চিহ্নিত করে বৈশাখকে নির্ধারণ করা হয়েছে।