টঙের ওপর বসে থেকেই সিরাজুদ্দি লক্ষ্য করল আশ্বিন-কার্তিক মাসের ম্যাড়ম্যাড়ে রোদের মতো লোকটা এগিয়ে আসছে এদিকে। মুখে কোনো কথা নেই, চোখে কেমন একটা পেলবতা। কি চায় লোকটা ওমন করে, কে জানে। সিরাজুদ্দি চিৎকার করে প্রশ্ন করতেই, লোকটা জানালো, ফজরালী মুন্সীর বাড়ি কোন্ দিকে...
ফজরালী মুন্সীর নাম শুনেই খানিক টানটান হয়ে যায় সিরাজুদ্দি। কে হতে পারে মানুষটা। যে কি না তার বাপের খোঁজ করছে, গ্রাম তো এখন দিনকে দিন লাফিয়ে-লাফিয়ে কেমন বদলে যাচ্ছে। আর গ্রামের মানুষগুলোও সে আর আগের মতো নেই। সহজ সোজা কেতাদুরস্ত ধরনের নরম স্বভাবের মানুষেরাও দিন দিন পালটে গেছে, পালটে যেতে চায়। শহর আর গ্রামের ব্যবধান ঘুঁচে যাচ্ছে অনুমান করা যায়। গ্রাম বলে হয়তো কিছুই থাকবে না,সবই শহর হয়ে যাবে, চাকরিজীবী মানুষের মাথা গোঁজার আশ্রয় যাকে বলে আর কি!
আগন্তুক লোকটা অকস্মাৎ বলে ওঠে, আমি রহিমবক্স, ফজরালী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি...
সিরাজুদ্দি টঙের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে যেভাবে বসে ছিলো সেভাবেই আছে, শুধু রহিমবক্সের দিকে তাকিয়ে মনে-মনে বললো, আজকাল তো মানুষজন বিনা কারণে আসে না, কোনো ধান্ধা ছাড়া কি কেউ সময় নষ্ট করে বাবা! তারপর বলে, আমি ফজরালীর ছেলে...
আগন্তুক যেন হাতে স্বর্গ পেলো, সময় মতো বৃষ্টি হলে কৃষকের মুখ যেমন আনন্দে ভরে ওঠে, রহিমবক্সের চোখ মুহূর্তে যেন সেভাবেই জ¦লজ¦ল করে জ¦লে উঠলো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে কেমন বাঁধো-বাঁধো। দূরের মাঠের সবুজ ধান লকলক করছে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই ধান কাটা হবে, মাড়াই হবে। ধান মানে তো প্রাণ কৃষকের প্রাণ! আশপাশের জমিগুলো শহরের বড়-বড় প্রমোটর আর শিল্পপতিদের হাতে বন্দি হয়ে গেছে এরই মধ্যে। খুব ঘন-ঘন সীমানা প্রাচীর বা ভাগের পিলার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।